বুয়েট যখন স্বপ্ন

দেশের প্রথম এবং শীর্ষ প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়; যা বুয়েট নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৮৭৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার মাঠ পর্যায়ে জরিপ পরিচালনা করার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকা সার্ভে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯০৫ সালে ঢাকার নওয়াব আহসানউল্লাহ এই স্কুলটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য নানান সহযোগিতাসহ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল, আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯৪৮ সালে কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান আমলে এই প্রতিষ্ঠানকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে এর নাম রাখা হয় পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।


বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি অনুষদের অধীনে ১৮ টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অনুষদগুলো হল: . প্রকৌশল অনুষদ . স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা অনুষদ . তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল অনুষদ . যন্ত্র কৌশল অনুষদ এবং প্রকৌশল অনুষদ। এছাড়াও নতুন নতুন জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার জন্য আরো ৪টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। সেগুলো হল . তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট . পানি বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট . এপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং . দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউট। 


বিভিন্ন পাঠ্যক্রম শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। বুয়েট থেকে পাশ করা অসংখ্য প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানীরা ইউরোপ আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা বিশ্বের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের কৃতিত্বের সাক্ষর রেখে চলেছেন। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে টেকসই সাশ্রয়ী আকাশচুম্বি অট্টালিকা তৈরীর পদ্ধতি অবিষ্কারক ফজলুর রহমান খান বুয়েটের ছাত্র ছিলেন। বাংলাদেশী মহান এই প্রকৌশলী শুধু বর্তমান পৃথিবীর ভবন নির্মান কাঠামোই বদলে দেননি, তিনি যেন মানব সভ্যতাকেই পৌছে দিয়েছেন নতুন এক মাত্রায়। এজন্য তাকে Structural Engineering এর Einstein বলা হয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে মৌলিক বিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম বুয়েটের শিক্ষার্থী। আইনস্টাইন পরবর্তী মহাবিশ্ব গবেষণায় এই বিজ্ঞানী অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক তথ্য প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীও বুয়েটের শিক্ষাথী ছিলেন। পদ্মার মত প্রমত্তা নদীর বুকে পদ্মা সেতুর মত অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল জটিলতার কারিগরি সমাধান দিয়েছেন একুশে পদক জয়ী বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁর সাথে পদ্মা সেতু নির্মানে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের শীর্ষ বিজ্ঞান চর্চার এই বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। এছাড়া বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কাজী জাহেদুল হাসান প্রতিষ্ঠা করেছেন কাজী ফার্মস, জা এন জি আইসক্রিম এবং দীপ্ত টেলিভিশন এর মত প্রতিষ্ঠান। বুয়েটের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী রিদওয়ান হাফিজ গো যায়ানের মত ট্রাভেল টেক স্টার্টআপ তৈরী করেছেন।


বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে প্রায় নিয়মিতই সেরার মুকুট ধারণ করে আসছে। শুধুমাত্র ২০২২ সালেই বুয়েট শিক্ষার্থীদের একাধিক দল আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ার এওয়ার্ড, ওয়াটার এন্ড হেলথ কনফারেন্সে স্যানিটেশন ওয়ার্কারস রিসার্চ এওয়ার্ড, ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারস এর সিগনাল প্রসেসিং কাপ চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে। এছাড়াও বিগত বছর গুলোতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত অংশগ্রহনেও অনেক আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেছে।


বাংলাদেশের যে সমস্ত ছাত্র ছাত্রীর প্রকৌশলী হবার ইচ্ছে থাকে, তাদের সবারই প্রথম পছন্দ বুয়েট। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মত নয়। বরং কিছুটা ব্যতিক্রম। তাই প্রস্তুতিটাও নিতে হয় সাজানো গোছানোভাবে। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক কিংবা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ক্ষতির কারণ হতে পারে। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করে প্রস্তুতি নিলে বুয়েট ভর্তি যুদ্ধে সফল হওয়া সম্ভব।


যেকোন ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত বইগুলোর উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করা অত্যন্ত জরুরী। এর মাধ্যমে . প্রশ্ন কেমন হয় . কোন অধ্যায় এবং বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে এবং . প্রশ্নোত্তরের জন্য কেমন সময় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা তৈরী হয়। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে,  The Royal BUET Question Bank বইটি অত্যন্ত কার্যকর ।  কারণ এই বইতে বিগত ২২ বছরের প্রতিটি প্রশ্ন পাঠ্য বইয়ের কোন অংশ থেকে এসেছে তা উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিগত বছরের প্রশ্নের আদলে নতুন কী কী প্রশ্ন হতে পারে, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন কোচিং এবং প্রকাশনীর অসংখ্য বইয়ের ভেতর থেকে সবচেয়ে গোছানো এবং প্রাঞ্জল ভর্তি সহায়ক বই বাছাই করে তা থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে The Royal Admission Books for Engineering& Varsity Admission Test  সিরিজের বইগুলো বেশ কার্যকর হতে পারে। বইগুলোতে প্রতিটি প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেওয়া আছে।


বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতির সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল মডেল টেস্ট অনুশীলন করা। মডেল টেস্ট সমাধানের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে পারে; সেই সাথে পরীক্ষার জন্য এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরী হয়। এক্ষেত্রে বুয়েট ভর্তিচ্ছুদের সবচেয়ে ভালো বন্ধুর পরিচয় দিবে The Royal BUET Model Test বইটি। এই বইতে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার আদলে ২০ টি মডেল টেস্ট দেওয়া আছে, যেখানে প্রশ্নপত্রেই উত্তর লিখে অনুশীলন করা যাবে। সেই সাথে উত্তর সঠিক হয়েছে কিনা তা দ্বিতীয় খন্ডের উত্তর পত্রের সহায়তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।


আশা করি এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে বুয়েট ভর্তি যুদ্ধে সফল হওয়া অনেক সহজ হবে। রয়েল সাইন্টিফিক পাবলিকেশন্স এর ওয়েবসাইট থেকে বইগুলো সহজেই অর্ডার করা যাবে


বইটির অর্ডার লিংকঃ https://trsp.link/BuetQuestionBank