যেভাবে আবিষ্কার হল কৃত্রিম মৌল

১৯৪০ সাল। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। প্রতিটি পরাক্রমশালী রাষ্ট্রেই তখন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছে। এমন সময় ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ল্যাবে এক আকস্মিক ঘটনার দেখা মিলল।

আর সব দিনের মতই বিজ্ঞানী এডুইন ম্যাকমিলান আর ফিলিপ এ্যাবেলসন পারমাণবিক বোমার প্রধান মৌল ইউরেনিয়াম(92U)নিয়ে কাজ করছিলেন। তারা একটি উচ্চগতিসম্পন্ন নিউট্রন দিয়ে ইউরেনিয়ামের একটি পরমাণুকে আঘাত করলেন। পারমাণবিক তত্ত্ব অনুযায়ী, পরমাণুটির নিউক্লিয়াসটি ভেঙে প্রচুর শক্তি আর তিনটি নতুন নিউট্রন উৎপন্ন হবার কথা।

কিন্তু সেদিন নিউক্লিয়াসটি তো ভাঙলই না বরং প্রোটনে পরিণত হয়ে নিউক্লিয়াসেই যুক্ত হলো। সুতরাং, নতুন পরমাণুটির পারমাণবিক সংখ্যা ইউরেনিয়ামের চেয়ে এক বেশি। এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে , এর আগে ইউরেনিয়ামই ছিল পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোচ্চ পারমাণবিক সংখ্যার(92) মৌল। নতুন মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা হল (92 + 1)= 93 , মৌলটির নাম দেয়া হল ‘নেপচুনিয়াম’ (নেপচুন গ্রহের নামানুসারে)।

নেপচুনিয়াম আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানের রাজ্যে ‘কৃত্রিম মৌল’ নামের একটি ধারণার উদ্ভব ঘটল। এরপর ম্যাকমিলান তার এক বন্ধু সিবার্গকে নিয়ে আবিষ্কার করলেন দ্বিতীয় কৃত্রিম মৌল ‘প্লুটোনিয়াম’(94)। এই আবিষ্কারের জন্য তাদেরকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। আজ অবধি ক্রমান্বয়ে 118 পারমাণবিক সংখ্যা পর্যন্ত মৌল প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে।

তবে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন মৌল আবিষ্কার ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ নিউক্লিয়াসের আকার যত বড় হবে ততই তার স্থিতিশীলতা কমে যায়। একদল বিজ্ঞানীর মতে, 130 পারমাণবিক সংখ্যা পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব।আরেকদল বিজ্ঞানীর মতে এই সংখ্যাটা 172। আশার কথা হচ্ছে, 119 পারমাণবিক সংখ্যার মৌলটির প্রস্তুতির কাজের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। হয়তো খুব কম সময়ের মধ্যেই আমরা পর্যায় সারণিতে নতুন মৌলটি দেখতে পাবো। আর এই আবিষ্কারগুলোই আমাদের মহাবিশ্বের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন পদার্থের আচরণ বুঝতে সাহায্য করবে, মানবজাতি এগিয়ে যাবে আরো এক ধাপ!

তথ্য উৎস্য:

দি রয়েল সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন্স কর্তৃক প্রকাশিত

The Elements

কৃত্রিম মৌল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন