যদি তোমার লক্ষ্য হয় একজন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, তবে বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) সেই স্বপ্নের পথে এক বিশাল মাইলফলক।
বুয়েট মানেই একটি সফল ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ, আর সাথে বোনাস হিসেবে পাবে অনবদ্য এক ক্যাম্পাস লাইফ। এখানে আছে হলের রোমাঞ্চকর জীবন, শত শত ফেস্টিভাল, প্রতিনিয়ত সিনিয়রদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার সুযোগ। বিশ্বমানসম্পন্ন ল্যাব, দক্ষ ফ্যাকাল্টি, এবং অসংখ্য সক্রিয় ক্লাব সবই তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
বুয়েট শুধু উচ্চমানের শিক্ষা কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বুয়েটের অবদান অনস্বীকার্য। বুয়েট থেকে পাশ করা অসংখ্য প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীরা ইউরোপ ও আমেরিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে টেকসই ও সাশ্রয়ী আকাশচুম্বি ভবন নির্মাণের পদ্ধতি আবিষ্কারক ফজলুর রহমান খান ছিলেন বুয়েটের ছাত্র। তাঁকে “ Structural Engineering -এর Einstein” বলা হয়। বাংলাদেশের আরেক বিশিষ্ট প্রকৌশলী, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, যিনি পদ্মা সেতুর মতো চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধান কারিগরি সমাধানদাতা, তিনিও বুয়েটের ছাত্র ছিলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অবদানও উল্লেখযোগ্য ।
তাছাড়া বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ICPC কম্পিটিশনে এশিয়া ওয়েস্ট চ্যাম্পিয়ন, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ার এওয়ার্ড, ওয়াটার এন্ড হেলথ কনফারেন্সে স্যানিটেশন ওয়ার্কারস রিসার্চ এওয়ার্ড, ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার এর সিগনাল প্রসেসিং কাপ চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিয়মিতই সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে ।
তাহলে অপেক্ষা কিসের? আজ থেকেই শুরু কর প্রস্তুতি!
তার আগে চলো জেনে নেই বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় যে বিষয়গুলি তোমাকে জানতেই হবে :-
০১. বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় Question Pattern যেমন হয়ঃ
● BUET Admission Test এর লিখিত পরীক্ষায় Math হতে ১৪ টি, Physics ও Chemistry হতে ১৩ টি করে মোট ৪০ টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০ করে মোট ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
● BUET Preli তে Math হতে ৩৪ টি, Physics এবং Chemistry হতে ৩৩ করে মোট ১০০ টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ করে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
০২. Time Management যেভাবে করলে ভালো হবেঃ
● BUET Preli মোট প্রশ্ন থাকে ১০০ টি ও সময় ১ ঘণ্টা বা ৬০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য গড়ে ৩৬ Second সময় পাবে।
● BUET Written Admission Test এ মোট প্রশ্ন থাকে ৪০ টি ও সময় ২ ঘণ্টা বা ১২০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য গড়ে ৩ মিনিট সময় পাবে।
০৩. BUET ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মান যেমন হয়ঃ
● BUET ভর্তি পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্নগুলো Analysis করলে দেখা যায় প্রশ্নগুলো মূল বইয়ের Conceptual Question। পরীক্ষার্থী যদি মূল বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের Concept গুলো Clear করে সেক্ষেত্রে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মোটেই কঠিন কিছু নয়। আর বিগত বছরের প্রশ্নগুলো অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই, এটি পরীক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মান বুঝাতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।
০৪. একাধিক অধ্যায় Merge করে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনাঃ
● অবশ্যই এরকম প্রশ্ন আসতে পারে। এ প্রশ্নগুলো করার মূল উদ্দেশ্য হল পরীক্ষার্থীর Concept Clear কি-না সেটি যাচাই করা। তাই পরীক্ষার্থীকে প্রতিটি অধ্যায়ের Concept গুলো স্পষ্টভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
০৫. Engineering ভর্তি পরীক্ষায় যেভাবে Negative Marking ও Partial Marking করা হয়ঃ
- • BUET Preli ভর্তি পরীক্ষায় Negative Marking আছে। এক্ষেত্রে MCQ এর প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জন্য বরাদ্দ নম্বরের ২৫% কাটা যাবে ।
- • তবে BUET Written Admission Test এ কোনরকম Negative Marking নেই। আর প্রশ্নের উত্তর ১০০% নির্ভুল না হলেও যতটুকু পর্যন্ত সঠিক ততটুকুর জন্য পরীক্ষার্থী Partial Marks পাবে। সেটি হতে পারে সূত্র লিখা, সূত্রে সঠিকভাবে মান বসানো, অজানা মান নির্ণয় করা ইত্যাদি।
০৬. BUET Admission Test এ লিখিত প্রশ্নপত্রে প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য যে পরিমাণ জায়গা/Space থাকেঃ
● BUET Admission Test এ লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের নিচে ঐ প্রশ্নের উত্তর করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকে। তবে এই নির্দিষ্ট জায়গা খুবই সংকীর্ন হয়। তাই কেবল প্রয়োজনীয় লাইন ব্যতীত কিছুই অতিরিক্ত লেখা যাবে না।
০৭. BUET Admission Test এ MCQ Math বা Calculation এর জন্য কোনো রাফ পেজ থাকে কি-না?
● BUET Preli ও BUET Written এ Extra কাগজ খাতার সাথে যুক্ত থাকে যেখানে রাফ করা যায়। রাফ কাগজ ছাড়া Extra কাগজ দেওয়া হয় না। রাফ কাগজে রাফ করো বা না করো রাফ কাগজটি খাতার সাথে জমা দিতে হবে।
০৮. লিখিত পরীক্ষায় Line Skip কি করা যায়?
● লিখিত পরীক্ষায় জায়গা খুবই সীমিত থাকে। তাই Line Skip করা কেবল উচিত ই না, বরং জরুরীও। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবে যেনো সূত্র ও মান বসানো একদম স্পষ্ট ও সঠিক হয়। Partial Marking এর ক্ষেত্রে এসব দেখা হয়, তাই সূত্র স্পষ্টভাবে লিখার চেষ্টা করবে।
০৯. লিখিত পরীক্ষায় Shortcut Technique ব্যবহার করা যাবে কিনা?
● লিখিত পরীক্ষায় জায়গা ও সময় যেহেতু খুবই সংক্ষিপ্ত হয়, তাই যেকোনো প্রকার Shortcut Technique ব্যবহার করা যায়। তবে অবশ্যই সেটি Logically & Scientifically Corect হতে হবে। তা না হলে এক্ষেত্রে Partial Mark পাওয়ার ও কোনো সম্ভাবনা নেই ।
১০. কি পরিমাণ Marks Secure করতে পারলে Chance নিশ্চিত করা যাবে?
● এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিবছর প্রশ্নের মানের উপর নির্ভর করে Cut Marks কম বেশি হয়ে থাকে। পরীক্ষার্থীদের মোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন সংখ্যার সমান সংখ্যক পরীক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। তাই তোমরা তোমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করা অত্যন্ত জরুরী।
এর মাধ্যমে.......
১. প্রশ্ন কেমন হয়
২. কোন অধ্যায় এবং বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে এবং
৩. প্রশ্নোত্তরের জন্য কেমন সময় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা তৈরী হয়।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে, The Royal BUET Question Bank বইটি অত্যন্ত কার্যকর ।
কারণ এই বইতে বিগত ২৪ বছরের প্রতিটি প্রশ্ন পাঠ্য বইয়ের কোন অংশ থেকে এসেছে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, বিগত বছরের প্রশ্নের আদলে নতুন কী কী প্রশ্ন হতে পারে, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বইটির অর্ডার লিংকঃ Click Here