একজন বাঙালি স্থপতির গল্প


ঘটনাটা ১৯৫২ সালের। বুয়েট (তৎকালীন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ) থেকে  আমেরিকায় পড়তে আসা এক যুবক দুচোখভরা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল বিশাল উচ্চতার একেকটা ভবনের দিকে। এর আগে সে এত উঁচু স্থাপনা কখনো দেখে নি।


তোমাদের মধ্যে যারা ছোটবেলায় লেগো (Lego toy) নিয়ে খেলেছ তারা একটি বিষয় লক্ষ্য করে থাকবে। কোনো স্থাপনা যতবেশি উঁচু হয়, ততই তার ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এই ভেঙে পড়া রোধ করতে স্থাপনার নিচের অংশে বেশি লেগো পাজেল ব্যবহার করতে হয় অর্থাৎ প্রশস্ত হতে হয়।যেমনটা দেখা যায় পিরামিডের দিকে তাকালে,যত বেশি নিচে ততই প্রশস্ত। একই কারণে উঁচু ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজন অনেকখানি জায়গা আর উপকরণ। 

লেগো দিয়ে বানানো টাওয়ার


এই সমস্যার কারণে তখন চল্লিশ তলার চেয়ে উঁচু ভবন তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সে সময়ের প্রকৌশলীরা। কিন্তু কয়েকবছর পরে এই সমস্যার সমাধান করল সেই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা যুবকটি। তার 'টিউবুলার ডিজাইন' আইডিয়া দিয়ে।


সেই যুবকটি আর কেউ নন, অন্যতম বাঙালি প্রকৌশলী ও স্থপতি স্যার ফজলুর রহমান খান বা সংক্ষেপে এফ আর খান।


এফ আর খান  উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত জ্যোতি ছড়িয়েছেন বিভিন্ন মাত্রায়,বিভিন্ন দিশায়। মূলত তাঁর হাত ধরেই জন্ম হয় Computer Aided Design(CAD) এর। এর আগে যেকোনো স্থাপনার নকশা করা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ ও কঠিন। তাঁর উদ্যোগে স্কিডমোর কোম্পানি প্রচুর অর্থায়ন করে এই ডিজাইন সফটওয়্যার গবেষণায়। CAD এর মাধ্যমে শুধু 2D ই না বরং 3D নকশাও করা সম্ভব।


 

CAD দিয়ে করা স্থাপনার নকশা


এছাড়াও এফ আর খান বিশ্বের অনেক বিখ্যাত স্থাপনার নকশা করেছেন। এরমধ্যে শিকাগোর উইলিস টাওয়ার,জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, আরিজোনার ম্যাকম্যাথ পিয়ারস্ সোলার টেলিস্কোপ, কলরেডোতে অবস্থিত আমেরিকার এয়ার ফোর্স একাডেমী অন্যতম।




জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর


প্রকৌশল ও স্থাপনাবিদ্যায় অনন্যা অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য উপাধী ও পুরস্কার অর্জন করেন। জেদ্দায় বিমান বন্দর নকশার জন্য অর্জন করেন 'আঁগা খান এ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার'। ১৯৯৯ সালে অর্জন করেন (মরণোত্তর) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার 'স্বাধীনতা পদক'।


আমেরিকায় ''ইন্জিনিয়ারিং নিউজ- রেকর্ড' নামের এক ম্যাগাজিন সমসাময়িক নির্মাণ প্রকৌশলে সবচেয়ে বেশি অবদানের জন্য কিছু মানুষের নাম প্রকাশ করে থাকে। সেখানে তাঁর নাম একবার দুইবার না বরং পাঁচবার প্রকাশিত হয়েছে। এফ আর খানকে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, লিহাই বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট এন্ড টেকনোলজি এই তিনটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে।

৩ এপ্রিল ২০১৭ র ডুডল



তাঁকে বলা হয় বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ স্ট্রাকচারাল ইন্জিনিয়ার। কেউ কেউ তাঁকে 'আইনস্টাইন অব স্ট্রাকচারাল ইন্জিনিয়ারিং' বলে থাকেন। ৩ ই এপ্রিল ২০১৭ সালে গুগল তাঁর ৮৮ তম জন্মদিনে সম্মান প্রদর্শন স্বরূপ একটি ডুডল প্রকাশ করে।


১৯৮২ সালের ২৭ ই মার্চ মাত্র ৫২ বছর বয়সে এই বিশ্বখ্যাত বাঙালি মৃত্যুবরণ করেন।



Writer: S. M. Firdous Siddiquee

BUET’19; WRE