কৃত্রিম ভাষা

               ব্যাকরণ পড়ার সময় আমরা প্রায়শই হোঁচট খাই ব্যতিক্রম উদাহরণগুলো মনে রাখতে গিয়ে। একবার ভেবে দেখো তো, কেমন হতো যদি একটা ভাষায় ব্যতিক্রম কিছু না থাকত? কিংবা ব্যাকরণের নিয়মকানুন যদি খুবই সরল হতো?


এই প্রশ্নগুলো মানুষকে ভাবিয়েছে। আর এই ভাবনা জন্ম দিয়েছে কৃত্রিম ভাষার (Constructed Language/ Conlang)। তবে কৃত্রিম ভাষার জন্মের ইতিহাসটা স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ভাষার মত না। স্বাভাবিক ভাষাগুলোর উৎপত্তি একটা অঞ্চলের মানুষের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যমে। অপরদিকে, কৃত্রিম ভাষা কোনো ব্যক্তি বা কিছু মানুষ মিলেই বানিয়ে ফেলতে পারে।


এই ভাষাগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে সহজ কিছু নিয়ম আর অল্প কিছু শব্দ। যেমন ধরা যাক এস্পেরান্দো (Esperando) ভাষাটির কথা। আমরা বাংলা অথবা ইংরেজিতে বিপরীত অর্থ প্রকাশ করতে নানা রকম উপসর্গ বা Prefix ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এস্পেরান্দোতে Prefix মাত্র দুটি- Mal, Ne.

বাংলা

ইংরেজি

এস্পেরান্দো

- (কাজ – অকাজ)


অন- (ইচ্ছা - অনিচ্ছা)


অনা- (সৃষ্টি - অনাসৃষ্টি)


অপ (যশ - অপযশ)


বি- (পথ – বিপথ)


পরা- (জয় - পরাজয়)

Im- (Practical – Impractical)

In- (Appropriate –Inappropriate)

Dis- (Like – Dislike)

Mis- (Lead – Mislead)

Un- (Kind – Unkind)

Ir- (Rational – Irrational)

Mal- (Bona – Malbona)

           good    bad

          (Lumo - Mallumo)

            Light   Dark

Ne-  (Praktika - Nepraktika)

         Practical    Impractical

          (Ebla - Neebla)

      Possible   Impossible


ভাষাটির উচ্চারণও বেশ সাবলীল। অর্থাৎ স্বাভাবিক ভাষার মতো বানান আর উচ্চারণে পার্থক্য নেই। যেমন ইংরেজিতে ‘Often' এর উচ্চারণে t উহ্য থাকে।

বিভিন্ন রকম কৃত্রিম ভাষা তৈরি হয় বিভিন্ন উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে। এস্পেরান্দো ভাষার জন্ম হয়েছে পোল্যান্ডের যামেনহফ নামের একজন চিকিৎসকের দশ বছরের সাধনায়। উনিশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষের মাঝে রেষারেষি ছিল। তিনি চেয়েছিলেন একটি সহজ ভাষায় যেন ইউরোপের সকল মানুষ কথা বলে, আর ভাষাগত বিভেদ দূর হয়।


আমরা যারা 'লর্ড অফ দা রিংস' পড়েছি বা মুভি দেখেছি তারা এল্ভস জাতিদের একটি অন্যরকম ভাষায় কথা বলতে দেখেছি। এটা হল এল্ভিভাষা। লেখক জে আর আর টকিয়েন এই কৃত্রিম ভাষাটি সৃষ্টি করেছেন।


মজার ব্যাপার হলো, তিনি এতেই ক্ষান্ত হন নি, সময় ও অবস্থানভেদে স্বাভাবিক ভাষার মত এল্ভস ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপও দিয়েছেন। একইভাবে 'গেম অফ থ্রোন্স' এ আমরা ডথ্রাকিভেলারিয়ান নামে দুইটি কৃত্রিম ভাষা দেখতে পাই। কিংবা এভাটার মুভিতে লক্ষ্য করি নাভিই নামের আরেকটি ভাষা। মুভি বা সিরিজে এসব ভাষা ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কাল্পনিক জাতির মাঝে বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলার জন্য।


পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট টোকি পোনা ভাষাটিও একটি কৃত্রিম ভাষা। কানাডার ভাষাতত্ত্ববিদ সোনিয়া লাং মাত্র ১৪৪ টি শব্দ দিয়ে এই ভাষাটিকে সৃষ্টি করেছেন। এই ভাষাটি তৈরির পিছনে তার একটি উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা। ঠিক এই কারণেই টোকি পোনা ভাষাটি ইতিবাচক শব্দবহুল। আর তাই একে বলা হয় The Language of Good.


প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বৈচিত্র্যময় সব ভাষার উদ্ভব ঘটছে। নতুন ভাষা তৈরির কাজটি বেশ মজার। একদিন হয়তো তোমাদের হাত ধরেই জন্ম হবে নতুন কোনো ভাষার, আরো সমৃদ্ধ হবে পৃথিবীর শব্দভান্ডার !

তবে এর জন্য প্রয়োজন ভাষার মৌলিক উপাদানগুলোর সুস্পষ্ট ধারণা ও ভাষাবিজ্ঞানের অগাধ জ্ঞান।



S. M. Firdous Siddiquee

WRE, BUET