পাই দিবস: হোক কলরব

লম্বা একটা শ্বাস নাও। এবার পাই এর মান বলতে থাক। দশমিকের পর কত ঘর পর্যন্ত তুমি বলতে পারলে- পাঁচ, দশ, নাকি আরও বেশি? ২০১৫ সালের পাই দিবসে জাপানের ইঞ্জিনিয়ার আকিরা হারাগুচি পাই এর মান দশমিকের পর এক লাখের বেশি ঘর বলে পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দেন।


এই যে পাই নিয়ে এত কথা বলছি, পাই কি জিনিস তা জানা আছে তো? তুমি দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলবে, এ আর এমন কি কঠিন প্রশ্ন। পাই হচ্ছে বৃত্তের পরিধি আর ব্যাসের অনুপাত। বৃত্ত সূর্যের মত বড় বা পরমাণুর মত ছোট হোক তবুও তার পরিধি আর ব্যাসের অনুপাত সবসময় একটা ধ্রুবক। এই ধ্রুবকটাই হচ্ছে পাই।


পাই এর মান দশমিকের পর অসীম পর্যন্ত চলতে থাকে, কখনোই শেষ হয়ে যায় না বা এমন কোনো প্যাটার্ন পাওয়া যায় না যেটা বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। এজন্য পাই কে বলা হয় অমূলদ সংখ্যা। এটা প্রথমবারের মত প্রমাণ করেন গণিতবিদ ল্যাম্বার্ড ১৭৬০ সালে।


আজকের তারিখটা কি খেয়াল আছে! তুমি যদি এই লেখাটি যেইদিন প্রকাশ হচ্ছে সেইদিনই পড়ে থাক তাহলে আজকের দিনটা হচ্ছে ১৪ মার্চ (১৪/০৩)। পাই এর মান দশমিকের পর দুই ঘর পর্যন্ত হচ্ছে ৩.১৪। ৩ কে যদি বছরের তৃতীয় মাস মার্চ ধরি তাহলে ১৪ মার্চ দিনটি একটা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই মিল খেয়াল করেই ১৯৮৮ সালের ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো পাই দিবসের আয়োজন করেন ল্যারি শ।




সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ২০০৬ সাল থেকে পাই দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে শোভাযাত্রা, পাই এর মান মুখস্ত বলা প্রতিযোগিতা, পাই আকৃতির কেক কাটা, গণিত নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি। এই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করেছে পাই লিখন কর্মসূচি। গণিত ভবন থেকে শুরু করে প্রায় ৩.১৪১৬ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে লেখা হয় পাই এর মান।




তুমি হয়ত ভেবে থাকতে পারো, পাই দিবস নিয়ে এত মাতামাতি করার কি আছে? দরকার আছে। সাধারণ মানুষ যখন পাই দিবসের উদযাপন দেখে তখন তাদের মধ্যে অবচেতন মনেই গণিতভীতি কিছুটা দূর হয়, গণিত যে নীরস কাটখোট্টা বিষয় নয় বরং মজার বিষয় এটা তারা বুঝতে পারেন।


পাই দিবসের গুরুত্ব উপলব্দি করে ২০১৯ সালে ইউনেস্কো পাই দিবসকে আন্তর্জাতিক গণিত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। বিজ্ঞানপ্রেমীদের কাছে এই দিনটি আরও একটি কারণে বিশেষ আনন্দের। কারণ, ১৮৭৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন।