জিপিএসঃ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও কার্যপ্রণালী

একবার আমেরিকা থেকে Flight-007 নামের একটি বিমান দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। প্রায় ১৪ ঘণ্টার দীর্ঘ পথ। তাই প্রথমে বিমানটি আলাস্কায় গিয়ে থামল, তারপর কিছুটা বিরতি নিয়ে সিউলের দিকে রওনা হল। কিন্তু এরপরেই হল বিপত্তি।


এই ঘটনাটি ১৯৮৩ সালের। সেসময় আমেরিকা আর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধ একদম তুঙ্গে। তো বিমানটি আলাস্কা থেকে সিউল যাবার পথে পাইলটের ভুলবশত সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমার মধ্যে ঢুকে পড়ে। এর কারণটাও স্পষ্ট। সেসময় বিমানে অবস্থান বোঝার মত কোনো জিপিএস (Global Positioning System) ডিভাইস ব্যবহার করা হত না। শুধুমাত্র মিলিটারিতে জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহৃত হত।






এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সেই যাত্রীবাহী বিমানটিকে আমেরিকার গুপ্তচর বিমান ভেবে মিসাইল আক্রমণ করে বসল। প্রাণ হারাল ২৬৯ জন যাত্রী।


ঘটনাটির প্রেক্ষিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান সিদ্ধান্ত নিলেন , জিপিএস প্রযুক্তি তিনি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন যেন এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সময়ের পরিক্রমে এই প্রযুক্তি আমাদের হাতের নাগালে, মুঠোফোনে। যা ছাড়া আমরা একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না।


এবার আমরা জানব জিপিএস কিভাবে কাজ করে। জিপিএস সিস্টেমে ৩২ টি স্যাটেলাইট রয়েছে, যা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। এরমধ্যে ২৪টি মূলত কাজ করে। বাকি ৮ টি অতিরিক্ত যেগুলো ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করে। যেকোনো সময়েই প্রতিটি স্থান অন্তত ৪ টি স্যাটেলাইটের আওতায় থাকে।


স্যাটেলাইটগুলো রেডিও তরঙ্গ পৃথিবীতে পাঠায়। এই তরঙ্গের মধ্যে থাকে স্যাটেলাইটের অবস্থান আর রেডিও তরঙ্গ প্রেরণের সময়ের তথ্য। আমাদের ফোনে থাকে GPS Receiver, যা গ্রহণ করে ঐ তরঙ্গটিকে আর রেকর্ড করে তরঙ্গ গ্রহণের সময়টাকে। এই দুই সময়ের পার্থক্যই হল, রেডিও তরঙ্গ স্যাটেলাইট থেকে ফোনে আসতে যে সময় লেগেছে সেটি।


আর যেকোনো তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের বেগ তো আমরা জানিই। প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার। এই বেগ আর সময়ের পার্থক্যকে গুণ করলেই আমরা পেয়ে যাব দূরত্ব।






ধরে নেই ,চারটি স্যাটেলাইট 1, 2, 3, 4 1 নং স্যাটেলাইট থেকে ফোনের দূরত্ব বের করা হলে এটুকু বোঝা যায় যে, একে কেন্দ্র করে ঐ দূরত্বকে ব্যাসার্ধ ধরে যে গোলক পাওয়া যাবে তারই কোনো এক বিন্দুতে আমাদের অবস্থান।


একইভাবে 2 3 নং স্যাটেলাইটের দূরত্ব বের করে গোলক আঁকলে, গোলকগুলোর মধ্যে দুইটি সাধারণ বিন্দু পাওয়া যায়। এই দুইটি বিন্দুর একটি পৃথিবীপৃষ্ঠে।আর সেটিই হল আমাদের অবস্থান।


তবে এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, রেডিও তরঙ্গের বেগ অনেক বেশি । তাই সময় পরিমাপে বিন্দুমাত্র ভুল হলে সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হবে না। হিসাব করলে দেখবে ১ মিলি সেকেন্ড সময় ভুলের কারণে দূরত্বের ভুল হয় ৩০০ কিলোমিটার।




তাই স্যাটেলাইটগুলোতে ব্যবহার করা হয় পারমাণবিক ঘড়ি। যা সবচেয়ে নির্ভুল সময় দেয়। এটি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় ফোনে ব্যবহার করা হয় না। ফোনে থাকে কোয়ার্টয ক্রিস্টাল ঘড়ি। এটি পারমাণবিক ঘড়ির মত নির্ভুল নয়। বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপে দেখা যায়, একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফোনের ঘড়ির সময় পারমাণবিক ঘড়ি থেকে কতটা ব্যবধানে।


এই সময়ের ব্যবধানের সমস্যাটি দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয় 4 নং স্যাটেলাইটটি। এখন পাঠকদের চিন্তা করার জন্য একটি প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি। জিপিএস ব্যবহার করে গুগল ম্যাপে কিভাবে লাইভ আপডেট দেয়?