শ্রবণোত্তর শব্দ দিয়ে রক্ত মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক জয়: চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত

আমাদের দেহে যখন খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে তখন আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ (organ) আক্রান্ত হলেও মস্তিষ্ক সুরক্ষিত থাকে। এর কারণ হচ্ছে মস্তিষ্কে এক ধরণের অভেদ্য দেয়াল থাকে যার কারণে ব্যাকটেরিয়া রক্ত থেকে মস্তিষ্কে যেতে পারে না। এই দেয়ালটিকেই বলা হয় রক্ত মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক। ইংরেজিতে blood brain barrier


আমরা জানি, ক্যাপিলারি রক্তনালির প্রাচীর এন্ডোথেলিয়াম দিয়ে তৈরি। এই এন্ডোথেলিয়াম প্রাচীরের সাথে পেরিসাইট এবং অ্যাস্ট্রোসাইট নামে মস্তিষ্কের বিশেষ ধরণের কোষ থাকে। এই কোষগুলো মস্তিষ্কের এন্ডোথেলিয়ামগুলোকে আঁটসাঁটভাবে (tight junction) থাকতে নির্দেশ (paracrine signal) দেয়। এই এন্ডোথেলিয়ামগুলো বৈষম্যভেদ্য পর্দার ন্যায় আচরণ করে। এই পর্দা ভেদ করে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ মস্তিষ্কের কোষে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া, ক্ষতিকর পদার্থ (toxin) ইত্যাদি এই পর্দা ভেদ করতে পারে না।




রক্ত মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধকের খারাপ দিকও রয়েছে। তোমরা নিশ্চয়ই পারকিনসন রোগের কথা শুনেছ। এই রোগ হলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের পরিমাণ কমে যায়। বাইরে থেকে রোগীর দেহে ডোপামিন দেওয়া হলেও রক্ত মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধকের কারণে তা রক্তনালী থেকে মস্তিষ্কের মধ্যে যেতে পারে না।


মস্তিষ্কে টিউমার হলে সার্জারি করে টিউমার কেটে ফেলা যায়। অনেকসময় টিউমার কেটে ফেলার পরও আবার সেখানে টিউমার দেখা যায়। এক্ষেত্রে কেমোথেরাপি ব্যবহার করে রোগীর চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু রক্ত মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধকের কারণে কেমোথেরাপির শক্তিশালী ঔষধ (যেমনঃ paclitaxel) মস্তিষ্কের যেখানে টিউমার হয়েছে সেখানে পৌঁছাতে পারে না।


এই রক্ত মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক জয় করার অনেকগুলো উপায় আছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে শ্রবণোত্তর শব্দ (ultrasound) ব্যবহার করা। শব্দের কম্পাংক ২০,০০০ হার্জের চেয়ে বেশি হলে মানুষের কান তা শুনতে পায় না। তখন সেটাকে শ্রবণোত্তর শব্দ বলে। ক্যাপিলারি রক্তনালির মধ্যে খুবই ছোট ছোট বাবল (microbubbles) প্রবেশ করানো হয়। এরপর শ্রবণোত্তর শব্দ প্রয়োগ করা হয়। শ্রবণোত্তর শব্দের প্রভাবে বাবলগুলো কাঁপতে থাকে। এর ফলে ক্যাপিলারি রক্তনালীর প্রাচীর এন্ডোথেলিয়ামে চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপের প্রভাবে রক্ত মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক খুলে যায়।


অতি সম্প্রতি আমেরিকার নর্থওয়েস্ট্রান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক উপরোক্ত কৌশল কাজে লাগিয়ে কেমোথেরাপির ঔষধ (albumin-bound paclitaxel) মস্তিষ্কের টিউমার কোষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। তারা ক্লিনিকাল পরীক্ষার প্রথম ধাপের ফলাফল খুবই মর্যাদাপূর্ণ ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশ করেছে।




Writer: Marshal Ashif Shawkat

BUET BME’19