এইচএসসি আইসিটিতে সর্বোচ্চ নম্বরের জন্য সঠিক প্রস্তুতি ও কৌশল !

প্রিয় এইচএসসি
পরীক্ষার্থী, তোমার আইসিটি পরীক্ষা একেবারে দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে! জানি তুমি
অনেক পরিশ্রম করছো। তবে, এই পরিশ্রমের সাথে প্রয়োজন সঠিক কৌশল, যার প্রয়োগে এই
অল্প সময়েই ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে। কারণ, তোমার পরীক্ষার প্রস্তুতির উপরেই
অনেকটা তোমার সেরা নম্বর পাওয়া নির্ভর করে। ভালো প্রস্তুতির জন্য সঠিক
অধ্যায়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া এবং খাতায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা খুবই জরুরি, কারণ
এতেই আসে সেরা নম্বর। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো, যা তোমাকে আইসিটি পরীক্ষায়
তোমার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে সাহায্য করবে।
১.
অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি (সৃজনশীল অংশ):
·
সহজ
অধ্যায়গুলো আগে নির্বাচন করো (তোমাকে ৮টি থেকে মোট ৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে):
o
অধ্যায়-১ ও ২: তোমরা যারা আইসিটি-তে (বিশেষ করে প্রোগ্রামিং-এ) তুলনামূলক দুর্বল,
তারা প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় দুটি আগে ভালোভাবে পড়ো। এই অধ্যায়গুলোতে তেমন জটিল
কিছু নেই, শুধু রিডিং পড়লেই সব মনে থাকবে। এছাড়া এই অধ্যায় দুটি থেকে মোট ৩টি প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি। তবে কমপক্ষে ১টি
করে মোট ২টি প্রশ্ন এই অধ্যায় দুটি থেকে প্রতি বছরই আসে।
o
অধ্যায়-৩: প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ের পরে তৃতীয় অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে বুঝে পড়বে। তৃতীয় অধ্যায়
থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ২টি প্রশ্ন অবশ্যই আসে। তৃতীয় অধ্যায়ের সবচাইতে
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই অধ্যায়ের প্রশ্নগুলোর উত্তর করা হলে পূর্ণ নম্বর
পাওয়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি থাকে। কারণ উত্তর সঠিক হলে সহজে নম্বর কাটার সুযোগ
থাকে না।
o
অধ্যায়-৪ ও ৫: সবশেষে তোমার যদি প্রোগ্রামিং ভালো
লাগে তবে আমার পরামর্শ থাকবে অবশ্যই প্রোগ্রামিং অধ্যায় ২টি (চতুর্থ এবং পঞ্চম
অধ্যায়) ভালোভাবে পড়বে, কারণ তৃতীয় অধ্যায়ের মতো এই অধ্যায় দুটি থেকে আসা প্রশ্নের
উত্তর করলে পূর্ণ নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চতুর্থ অধ্যায় থেকে ১টি এবং
পঞ্চম অধ্যায় থেকে ২টি মোট ৩টি প্রশ্ন প্রায় প্রতিবছরই আসে।
লক্ষ্য করো: তুমি চাইলে শুধু তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায় ৩টি থেকেই ৫টি
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে এবং এই ৩টি অধ্যায় থেকেই সবচাইতে বেশি নম্বর
পাওয়া যায়। কেননা বানানগত ভুলের জন্য নম্বর কাটার সুযোগ নেই বললেই চলে।
·
অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ
টপিকগুলোতে মনোযোগ দাও:
o প্রথম অধ্যায় (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: বিশ্ব ও বাংলাদেশ
প্রেক্ষিত): ভার্চুয়াল রিয়েলিটি,
ক্রায়োসার্জারি, বায়োমেট্রিক, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানো টেকনোলজি - এই ৫টি
টপিক মনোযোগ দিয়ে পড়লে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
o দ্বিতীয় অধ্যায় (কমিউনিকেশন সিস্টেমস ও নেটওয়ার্কিং): ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড ও মোড, অপটিক ফাইবার ক্যাবল, ওয়াইফাই,
ওয়াইম্যাক্স, নেটওয়ার্ক ডিভাইস (হাব ও সুইচ), নেটওয়ার্ক টপোলজি (বাস, রিং,
স্টার, ট্রি, মেশ) এবং ক্লাউড কম্পিউটিং টপিকগুলো ভালোভাবে বুঝে পড়বে।
o তৃতীয় অধ্যায় (সংখ্যা পদ্ধতি ও ডিজিটাল ডিভাইস): সংখ্যা পদ্ধতির রূপান্তর, ২ এর পরিপূরক, লজিক গেইট, সার্বজনীন
গেইট, লজিক ফাংশন ও গেইট সরলীকরণ, হাফ/ফুল অ্যাডার বাস্তবায়ন- এই টপিকগুলো মনোযোগ
দিয়ে পড়লে ভালো নম্বর পাওয়া সহজ
হবে।
o চতুর্থ অধ্যায় (ওয়েব ডিজাইন পরিচিতি এবং HTML): ওয়েবসাইট কাঠামো, তালিকা বা লিস্ট তৈরি, টেবিল তৈরি, ছবি
সংযোজন, হাইপারলিঙ্ক সংযোজন - এই টপিক এবং টপিকগুলো জন্য HTML কোড লেখা ভালোভাবে
আয়ত্ত করতে পারলে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
o পঞ্চম অধ্যায় (প্রোগ্রামিং ভাষা): অনুবাদক প্রোগ্রাম, অ্যালগরিদম,
ফ্লোচার্ট, কন্ডিশনাল স্টেটমেন্ট (if, else if ও else), লুপ স্টেটমেন্ট (for,
while, continue ও break) টপিক এবং টপিকগুলো জন্য প্রোগ্রাম লেখা ভালোভাবে বুঝে
পড়বে।
উপরোক্ত অধ্যায়ভিত্তিক
টপিকগুলো ভালোভাবে বুঝে পড়লে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করা খুবই সহজ হবে। তবে এই টপিক
ব্যতীত অন্য টপিক থেকেও অনেক সময় প্রশ্ন হয়ে থাকে, তাই পাঠ্যবইয়ের অন্য টপিকগুলোও
পড়ার চেষ্টা করতে হবে।
২.
অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি (MCQ অংশ):
এমসিকিউতে
ভালো করার জন্য প্রতিটি অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু এবং ছোট ছোট সংজ্ঞা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। মুখস্থ না
করে বুঝে পড়লে এমসিকিউতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে আমার পরামর্শ হবে বিগত
বছরের সকল বোর্ডে আসা MCQ প্রশ্নগুলো ভালোভাবে বুঝে চর্চা করবে, তাহলে খুব সহজেই
অল্প পড়ে ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে। কারণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রায় ৮০% থেকে ৯০% প্রশ্ন বিগত পরীক্ষার প্রশ্ন থেকেই
হয়ে থাকে।
৩. খাতায় লেখার কৌশল ও উপস্থাপন (সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ):
- প্রশ্ন ভালোভাবে পড়া: প্রতিটি প্রশ্ন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বে। কী জানতে চাওয়া
হয়েছে, তা বোঝার চেষ্টা করো। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে প্রশ্ন ভুল
পড়লে উত্তরও ভুল হয়ে যায়।
- নম্বর অনুযায়ী উত্তর লেখা: উত্তর লেখার ক্ষেত্রে সবসময় খেয়াল রাখবে বেশি লিখলেই বেশি নম্বর পাওয়া যায় না,
এমনকি কখনও কখনও বেশি লেখার কারণে পরীক্ষকেরা নম্বর কম দিয়ে থাকেন। তাই
প্রশ্নের নম্বর অনুসারে উত্তর লিখার দিকে খেয়াল রাখবে। যেমন: সৃজনশীল (ক) নং প্রশ্নের
নম্বর ১ হওয়ায় (ক) এর জন্য ১ বা সর্বোচ্চ ২ লাইনে উত্তর লিখবে এবং সৃজনশীল
(খ) নং প্রশ্নের নম্বর ২ হওয়ায় প্রশ্নের উত্তর ৫ বা ৬ লাইনে সুন্দরভাবে
ব্যাখ্যা করতে পারলেই যথেষ্ট। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবে প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে
সেটি যেন উক্ত লেখার মধ্যেই স্পষ্টভাবে তুলে ধরা যায়।
- পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন লেখা: তোমার লেখা যত সুন্দর ও স্পষ্ট হবে, পরীক্ষকের জন্য তা
পড়তে ততো সুবিধা হবে। কাটাকাটি যথাসম্ভব কম করবে। যদি ভুল হয়, তাহলে একটান
দিয়ে কেটে দেবে, ঘষামাজা করবে না। খাতায় বেশি কাটাকাটি এবং লেখা অস্পষ্ট হলে
পরীক্ষক খাতা দেখতে বিরক্তবোধ করতে পারেন, ফলে তোমার নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা
কমে যায়।
- অংক ও প্রোগ্রামিং প্রশ্নের
উত্তর লেখা: যথাসম্ভব অংক এবং প্রোগ্রামিং থেকে আসা প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার
চেষ্টা করবে। কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় দুটির তুলনায় এই অধ্যায়গুলো থেকে
বেশি নম্বর তোলা অনেক সহজ। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে শুধু উত্তর করলেই হবে
না, উত্তরটি যেন সঠিক এবং প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়।
- প্রোগ্রামে ভুল এরানো: সর্বদা চেষ্টা করবে প্রোগ্রাম লেখার সময় প্রোগ্রামে যেন
সিনট্যাক্সগত কোনো ভুল না হয় এবং প্রশ্নে যে ধরনের প্রোগ্রাম চাওয়া হয়েছে
তোমার লেখা প্রোগ্রামটি যেন তার সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়। কারণ প্রোগ্রামিংয়ে যেমন
পূর্ণ নম্বর তোলা সহজ তেমনি সিনট্যাক্সগত কোনো ছোট ভুলের (যেমন: printf এর
পরিবর্তে print ফাংশন ব্যবহার করা, int ডেটাতে ফরম্যাট স্পেসিফায়ার হিসেবে %i
ব্যবহার করা ইত্যাদি) কারণে সম্পূর্ণ প্রোগ্রামটি ভুল হয়ে যেতে পারে। ফলে
তোমার উত্তর শূন্য হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, প্রোগ্রামে যেমন নম্বর তোলা
সহজ তেমনি খুবই সামান্য ভুলের কারণে সম্পূর্ণ নম্বরই হাতছাড়া হতে পারে। এজন্য
প্রোগ্রামিং অধ্যায় থেকে উত্তর করার ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক থাকবে।
- প্রয়োজনীয় চিত্র ও ফ্লোচার্ট
আঁকা: আইসিটিতে অনেক সময় চিত্র,
ফ্লোচার্ট প্রয়োজন হয়। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে অবশ্যই এগুলো দেবে এবং
অবশ্যই পেন্সিল দিয়ে সুন্দর করে আঁকবে। যা তোমার উত্তরকে আরও বেশি আকর্ষণীয়
ও তথ্যবহুল করে তুলবে।
- সময়ের দিকে খেয়াল রাখবে: প্রতিটি প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে নাও।
কোনো একটি প্রশ্নে বেশি সময় ব্যয় করে অন্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাকি রেখে
দেবে না। অবশ্যই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা
করবে।
- অতিরিক্ত লেখা থেকে বিরত থাকো: যতটুকু চাওয়া হয়েছে, ততটুকুই লেখো। অপ্রয়োজনীয় বা
অতিরিক্ত কথা বিশেষ করে একই কথা বারবার লিখে খাতা ভরানোর চেষ্টা করবে না। এতে
পরীক্ষক বিরক্ত হতে পারেন এবং সময়ও নষ্ট হবে।
- রিভিশন দাও: সব উত্তর লেখা শেষ হলে একবার রিভিশন দাও। বানান ভুল,
বাক্য গঠন, প্রোগ্রামে ভুল (যেমন: স্টেটমেন্টের পরে সেমিকলন না দেওয়া, ভুল
ভ্যারিয়েবল প্রিন্ট করা, এইচটিএমএল টেবিল তৈরির সময় রো বা কলাম বাদ পরা
ইত্যাদি) বা কোনো তথ্য বাদ পড়লো কিনা, তা দেখে নাও।
৪.
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও মানসিকতা:
- আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকো: পরীক্ষার আগের এই ক'টা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। অস্থির না
হয়ে ঠান্ডা মাথায় যা পড়েছো, তা রিভাইজ করো।
- সময় ভাগ করে পড়ো: শেষ সময়ে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে সমানভাবে সময়
দাও। নতুন কিছু শেখার চেয়ে যা পড়েছো, তা ঝালাই করাই বেশি জরুরি।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করো: পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম খুবই দরকার। মস্তিষ্ক সতেজ
থাকলে পরীক্ষায় মনোযোগ দিতে পারবে এবং মনেও থাকবে বেশি।
সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এখন পরীক্ষার আগে শুধুমাত্র বিগত বোর্ড পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলোই
ভালোভাবে বুঝে পড়বে, বিভিন্ন কলেজের জটিল জটিল প্রশ্ন পড়ে শুধু শুধু নিজেকে হতাশ করবে
না। কারণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রশ্ন বিগত বছরের
পরীক্ষার প্রশ্ন থেকেই হয়ে থাকে।