এইচএসসি পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষায় যেভাবে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে !

প্রিয় এইচএসসি
পরীক্ষার্থী, তোমার পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষা
একেবারে দরজায় কড়া নাড়ছে! আশা করি এই পরীক্ষার জন্য তুমি অক্লান্ত পরিশ্রম করছো।
এই পরিশ্রমের সাথে সঠিক কৌশল অবলম্বনে এই অল্প সময়েই তুমি চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে
পারবে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির জন্য সঠিক অধ্যায়গুলোতে মনোযোগ দেওয়া এবং খাতায়
সুন্দরভাবে তা উপস্থাপন করা খুবই জরুরি, কারণ এতেই আসে সেরা নম্বর। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো, যা পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষায় তোমার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে
সাহায্য করবে।
☑ অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি (সৃজনশীল অংশ):
· সহজ অধ্যায়গুলো আগে
নির্বাচন করো (তোমাকে ৮টি থেকে মোট ৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে):
✓ অধ্যায়—৫, ৬ ও ৭ (আংশিক): প্রশ্নোত্তরে
পঞ্চম,
ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায়ের সূত্রগুলোর প্রয়োগ এবং গাণিতিক সমস্যার
সমাধান খুবই সহজ। এ অধ্যায়গুলো থেকে আসা প্রশ্নের ‘গ’
ও ‘ঘ’ অংশের সমাধান মূলত গাণিতিক সমস্যা হয় এবং তাত্ত্বিক বিষয়াবলি
লেখার খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। এই অধ্যায় তিনটি হতে মোট ৪টি সৃজনশীল প্রশ্ন আসার
সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কমপক্ষে ১টি করে মোট তিনটি প্রশ্ন এই তিনটি অধ্যায় থেকে প্রায়
প্রতি বছরই আসে।
✓ অধ্যায়—৮ ও ১০: প্রথমে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায় পড়ার পর অষ্টম ও দশম অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে
পড়তে হবে। এই অধ্যায় দুটি হতে প্রতি বছরই ১টি করে মোট দু’টি প্রশ্ন আসে।
✓ অধ্যায়—১ (আংশিক), ২ ও ৪: প্রথম অধ্যায়
হতে সর্বোচ্চ ১টি প্রশ্ন আসতে পারে, তবে না আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয় ও চতুর্থ অধ্যায় হতে কমপক্ষে ১টি করে প্রশ্ন
প্রতি বছরই আসে তবে একাধিক প্রশ্ন আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই অধ্যায় দুটি হতে প্রায়শই
তুলনামূলক কঠিন প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। তাই অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন কমন পরলে যদি
দেখো যে এই অধ্যায় হতে জটিল প্রশ্ন এসেছে তাহলে এরূপ জটিল দুটি প্রশ্নের উত্তর না
করাই উত্তম।
লক্ষ করো, প্রস্তুতির সময় কম রয়েছে মনে হলে তুমি
চাইলে শুধুমাত্র তুলনামূলক সহজ অধ্যায়গুলো [পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম (আংশিক), অষ্টম ও দশম অধ্যায়]
ভালোভাবে পড়েই ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে বাকি তিনটি
অধ্যায় বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তরের জন্য অবশ্যই ভালো করে পড়তে হবে।
· অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ
টপিকগুলোতে মনোযোগ দাও টপিকগুলো নিম্নরূপ:
✓ প্রথম অধ্যায় (ভৌতজগত
ও পরিমাপ): স্ফেরোমিটার।
✓ দ্বিতীয় অধ্যায় (ভেক্টর):
বল,
ঘূর্ণন বল, একক ভেক্টর, নাল ভেক্টর, অবস্থান ভেক্টর, সরণ ভেক্টর, ভেক্টরের যোজন, বিয়োজন ও বিভাজন, স্কেলার ও ভেক্টর গুণন, গ্রেডিয়েন্ট, ডাইভারজেন্স, কার্ল, ভেক্টর ক্যালকুলাস।
✓ চতুর্থ অধ্যায় (নিউটনিয়ান
বলবিদ্যা): নিউটনের গতি সূত্রগুলোর সম্পর্ক, ব্যবহার ও সীমাবদ্ধতা, বল, ক্ষেত্র ও প্রাবল্য, রৈখিক ভরবেগের নিত্যতা, জড়তার ভ্রামক, কৌণিক ভরবেগ, টর্ক,
কৌণিক ত্বরণ, সংঘর্ষ।
✓ পঞ্চম অধ্যায় (কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা): স্থির বল, পরিবর্তনশীল বল, অভিকর্ষ বল, গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তি, শক্তির নিত্যতা, ক্ষমতা, কর্মদক্ষতা। তন্মধ্যে শক্তির নিত্যতা টপিকটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
✓ ষষ্ঠ অধ্যায় (মহাকর্ষ
ও অভিকর্ষ): গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র, কেপলারের সূত্র মহাকর্ষ বল, বিভব ও প্রাবল্য, অভিকর্ষ কেন্দ্র, মুক্তিবেগ ও কৃত্রিম উপগ্রহ।
✓ সপ্তম অধ্যায় (পদার্থের
গাঠনিক ধর্ম): আয়নিক বন্ধন, সমযোজী বন্ধন, ধাতব বন্ধন, ভ্যানডারওয়ালস বন্ধন, স্থিতিস্থাপকতা, পীড়ন, বিকৃতি, স্থিতিস্থাপক সীমা, হুকের সূত্র, ইয়ং গুণাঙ্ক, পয়সনের অনুপাত। তন্মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা সংক্রান্ত সকল বিষয়
সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
✓ অষ্টম অধ্যায় (পর্যাবৃত্ত
গতি): সরল ছন্দিত গতি, সরল দোলকের গতি, স্প্রিং এর গতি। এছাড়াও বিভিন্ন অবস্থানের উচ্চতা ও সরল দোলকের
দোলনকাল এই অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
✓ দশম অধ্যায় (আদর্শ
গ্যাস ও গ্যাসের গতিতত্ত্ব): আদর্শ গ্যাস সূত্র, গ্যাসের অণুর মৌলিক স্বীকার্য, গ্যাসের গতিতত্ত্ব, শক্তির সমবিভাজন নীতি, জলীয় বাষ্প, বায়ুর চাপ, শিশিরাঙ্ক ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা।
উপরোক্ত অধ্যায়ভিত্তিক টপিকগুলো ভালোভাবে বুঝে পড়লে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করা
খুবই সহজ হবে। তবে এই টপিক ব্যতীত অন্য টপিক থেকেও অনেক সময় প্রশ্ন হয়ে থাকে, তাই সময় থাকলে পাঠ্যবইয়ের অন্য টপিকগুলোও পড়ার চেষ্টা করতে
হবে।
☑ অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি (বহুনির্বাচনি অংশ):
MCQ-তে ভালো করার জন্য প্রতিটি অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু, ছোট ছোট সংজ্ঞা ও উদাহরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা অত্যন্ত
জরুরি এবং তুলনামূলক সহজ গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে হবে, মুখস্ত না করে বুঝে পড়লে MCQ-তে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে আমার পরামর্শ হবে বিগত বছরের সকল বোর্ডে আসা
MCQ প্রশ্নগুলো ভালোভাবে বুঝে চর্চা করবে, তাহলে খুব সহজেই অল্প পড়ে ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে। কারণ
প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রায় ৮০% থেকে ৯০% প্রশ্ন বিগত পরীক্ষার প্রশ্নের
অনুরূপ হয়ে থাকে।
☑ খাতায় লেখার কৌশল ও উপস্থাপন (সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ অংশ):
· প্রশ্ন ভালোভাবে পড়া
ও প্রশ্ন নির্বাচন করা: প্রতিটি প্রশ্ন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বে। কী জানতে চাওয়া হয়েছে, তা বোঝার চেষ্টা করো। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে প্রশ্ন
ভুল পড়লে উত্তরও ভুল হয়ে যায়। প্রথমে নির্ধারণ করো তুমি কোন প্রশ্নগুলো উত্তর করবে
এবং সবচেয়ে সহজ উত্তর যেটির হবে বলে মনে হয় তা দিয়ে শুরু করো।
· নম্বর অনুযায়ী মার্জিতভাবে
উত্তর লেখা: উত্তর লেখার ক্ষেত্রে সবসময় খেয়াল রাখলে বেশি লিখলেই বেশি নম্বর পাওয়া
যায় না,
এমনকি কখনও কখনও বেশি লেখার কারণে পরীক্ষকগণ নম্বর কম দিয়ে
থাকেন। তাই প্রশ্নের নম্বর অনুসারে উত্তর লিখার দিকে খেয়াল রাখবে। যেমন: সৃজনশীল
(ক) নং প্রশ্নের নম্বর ১ হওয়ায় (ক) এর জন্য ১ বা সর্বোচ্চ ২ লাইনে উত্তর লিখবে এবং
সৃজনশীল (খ) নং প্রশ্নের নম্বর ২ হওয়ায় প্রশ্নের উত্তর ৫ বা ৬ লাইনে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা
করতে পারলেই যথেষ্ট। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবে প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে সেটি যেন উক্ত
লেখার মধ্যেই স্পষ্টভাবে তুলে ধরা যায়। উত্তরের শুরুতেই মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে
এবং অপ্রয়োজনীয় কিছু লিখবে না।
· পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন
লেখা: তোমার লেখা যত সুন্দর ও স্পষ্ট হবে, পরীক্ষকের জন্য তা পড়তে ততো সুবিধা হবে। কাটাকাটি যথাসম্ভব কম করবে। যদি ভুল হয়, তাহলে একটান দিয়ে কেটে দিবে, ঘষামাজা করবে না। খাতায় বেশি কাটাকাটি এবং লেখা অস্পষ্ট হলে পরীক্ষক খাতা দেখতে
বিরক্তবোধ করতে পারেন, ফলে তোমার নম্বর পাওয়ার
সম্ভাবনা কমে যায়। লেখা যদি সুন্দর নাও হয় তবুও অন্তত স্পষ্ট হতে হবে।
· প্রয়োজনীয় চিত্র আঁকা:
অনেক ক্ষেত্রেই কোনো সমস্যার সমাধান বিশ্লেষণের জন্য চিত্র অঙ্কনের প্রয়োজন হয়। এসকল
ক্ষেত্রে চিত্র আঁকতে হবে। তবে চিত্র আঁকার সময় সাবধান থাকতে হবে, কারণ ভুল চিত্র আঁকলে অবশ্যই নম্বর কাটা যাবে।
· গাণিতিক সমস্যার সমাধান:
অনেকেই গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সময় কিছু লাইন বাদ দিয়ে সমস্যার সমাধান করে। এজন্য
অনেক ক্ষেত্রে উত্তর বুঝতে সমস্যা তৈরি হয়। তাই গাণিতিক সমস্যা সমাধানে লাইন বাদ দেওয়া
যাবে না। তোমরা অনেকেই সৃজনশীলের ‘গ’ অংশে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পর তাত্ত্বিক আলোচনা করো। এই তাত্ত্বিক
আলোচনার পরিমাণ কম হতে হবে এবং যদি প্রশ্নে না চায় তাহলে এই আলোচনা এড়িয়ে যাওয়াই
উত্তম। সৃজনশীল প্রশ্নের ‘ঘ’ অংশের প্রশ্নে তোমার মতামত জানতে চাওয়া হবে বা কোনো বিষয় যুক্তির
মাধ্যমে উপস্থাপন করতে বলবে। তাই গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পর তাত্ত্বিক আলোচনা মূলত
‘ঘ’ অংশের প্রশ্নোত্তরেই
করতে হয়।
· স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ:
নির্ধারিত কোনো প্রশ্নের উত্তর ভুল করে ফেললে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। যদি প্রকৃত সমাধান
বুঝতে পারো তাহলে তখন সেটাই শুরু করো অথবা অন্য প্রশ্নের উত্তর শুরু করে দাও। ঘাবড়ে
গেলে আত্মবিশ্বাস কমে যাবে এবং ভুল করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
· সময়ের দিকে খেয়াল
রাখবে: প্রতিটি প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে নাও। কোনো একটি প্রশ্ন বেশি
সময় ব্যয় করে অন্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাকি রেখে দিবে না। অবশ্যই সব প্রশ্নের
উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে।
· অতিরিক্ত লেখা থেকে
বিরত থাকো: যতটুকু চাওয়া হয়েছে, ততটুকু লেখো। অপ্রয়োজনীয়
বা অতিরিক্ত কথা বিশেষ করে একই কথা বারবার লিখে খাতা ভরানোর চেষ্টা করবে না। এতে পরীক্ষক
বিরক্ত হতে পারেন, যার ফলে নম্বর কাটা
যাবে এবং সময়ও নষ্ট হবে।
· রিভিশন দাও: সব উত্তর
লেখা শেষ হলে একবার রিভিশন দাও। বানান ভুল, বাক্য গঠন, গাণিতিক চিহ্ন, হিসাব, কনসেপ্ট ভুল হলো কিনা
বা কোনো তথ্য বাদ পড়লো কিনা, তা একবার দেখে নাও।
☑ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও মানসিকতা:
· আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত
থাকো: পরীক্ষার আগের এই কয়টা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। অস্থির না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায়
যা পড়ছো,
তা রিভাইজ করো। মূল বিষয়গুলোতে মনোযোগ দাও।
· সময় ভাগ করে পড়ো:
শেষ সময়ে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে সমানভাবে সময় দাও। নতুন কিছু শেখার চেয়ে
যা পড়েছো, তা ঝালাই করাই বেশি জরুরি।
· পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত
করো: পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম খুবই দরকার। মস্তিষ্ক সতেজ থাকলে পরীক্ষায় মনোযোগ
দিতে পারবে এবং মনেও থাকবে বেশি।
সবশেষে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো এখন পরীক্ষার আগে শুধুমাত্র বিগত বোর্ড পরীক্ষায়
আসা প্রশ্নগুলোই ভালোভাবে বুঝে পড়বে, বিভিন্ন কলেজের জটিল জটিল প্রশ্ন পড়ে শুধু শুধু নিজেকে হতাশ করবে না। কারণ বিগত
বছরের বোর্ড প্রশ্নাবলি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রশ্ন বিগত
বছরের পরীক্ষার প্রশ্ন থেকেই বা তার অনুরূপ হয়ে থাকে।