উচ্চতর গণিত ২য় পত্রে টপার হওয়া ও চূড়ান্ত প্রস্তুতির সেরা কৌশল!

প্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা,
আশা করি তোমাদের উচ্চতর গণিত প্রথম
পত্র পরীক্ষা ভালো হয়েছে। পূর্বে উচ্চতর গণিত প্রথম পত্র পরীক্ষার জন্য তোমাদের জন্য কিছু দিক নির্দেশনা
দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় উচ্চতর গণিত দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ভালো করার কৌশল উল্লেখ
করা হলো-
þ
শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি:
সাধারণত বোর্ড পরীক্ষার
প্রশ্নগুলো বিগত বছরে আসা প্রশ্নগুলোর অনুরূপ হয়ে থাকে। তাই পরীক্ষার আগে এই স্বল্প
সময়ে বোর্ড পরীক্ষায় আসা বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বার বার অনুশীলন করবে। উচ্চতর গণিত
দ্বিতীয় পত্রের সব সূত্রসমূহ বার বার লিখে অনুশীল করবে।
þ অধ্যায়ভিত্তিক
পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি:
উচ্চ মাধ্যমিকে উচ্চতর
গণিত পরীক্ষায় দুইটি অংশ থাকে। তত্ত্বীয় (৭৫ নম্বর) ও ব্যবহারিক (২৫ নম্বর)।তত্ত্বীয়
অংশের পরীক্ষা মূলত বহুনির্বাচনি (২৫ নম্বর) ও সৃজনশীল (৫০ নম্বর) এই দুই অংশে বিভক্ত।
সৃজনশীল অংশ দুইটি বিভাগে বিভক্ত। ক-বিভাগ (বীজগণিত ও জ্যামিতি) এবং খ-বিভাগ (ত্রিকোণমিতি
ও ক্যালকুলাস)। প্রতিটি বিভাগে ৪ টি করে মোট ৮ টি প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি বিভাগ হতে
২ টি করে মোট ৫ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য সবগুলো অধ্যায়েই
প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
· তৃতীয় অধ্যায়
(জটিল সংখ্যা):
জটিল সংখ্যা ও এর
জ্যামিতিক প্রতিরূপ আর্গণ্ড চিত্র, জটিল সংখ্যার মডুলাস ও আর্গুমেন্ট নির্ণয় এবং তাদের
পোলার আকারে প্রকাশ, সঞ্চারপথের সমীকরণ নির্ণয় সংক্রান্ত, জটিল সংখ্যার বর্গমূল ও ঘনমূল
নির্ণয় সংক্রান্ত, জটিল সংখ্যা বিশিষ্ট গাণিতিক সমস্যাবলির প্রমাণ, একের জটিল ঘনমূল
সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যাবলীর প্রমাণ।
· চতুর্থ
অধ্যায় (বহুপদী ও বহুপদী সমীকরণ):
ü দ্বিঘাত
সমীকরণ:
নিশ্চায়কের সাহায্যে
মূলের প্রকৃতি নির্ণয়, সমীকরণের মূলগুলোর বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ সংক্রান্ত, সমীকরণের মূলের
বৈশিষ্ট্য থেকে অজানা ধ্রুবকের মান নির্ণয় সংক্রান্ত, দ্বিঘাত সমীকরণের মূলদ্বয়ের যোগফল
এবং গুণফল থেকে বিভিন্ন প্রমাণ সংক্রান্ত, দ্বিঘাত সমীকরণ গঠন সংক্রান্ত, অনুবন্ধী
মূল সংক্রান্ত, দ্বিঘাত সমীকরণ সংক্রান্ত বিবিধ সমস্যা।
ü ত্রিঘাত
সমীকরণ:
ত্রিঘাত সমীকরণের
মূল বিশিষ্ট বিভিন্ন রাশির মান নির্ণয়, মূলের সাহায্যে ত্রিঘাত সমীকরণ নির্ণয়, ত্রিঘাত
সমীকরণ সংক্রান্ত বিবিধ সমস্যা।
· ষষ্ঠ অধ্যায়
(কনিক):
পরাবৃত্ত:
y2 =
4ax এবং x2 = 4ay পরাবৃত্তের বিভিন্ন অংশ নির্ণয়, পরাবৃত্তের উপরস্থ কোনো
বিন্দুর স্থানাঙ্ক নির্ণয়, উপকেন্দ্র এবং নিয়ামক রেখার সাহায্যে পরাবৃত্তের সমীকরণ
নির্ণয়, উপকেন্দ্র এবং শীর্ষবিন্দুর সাহায্যে নিয়ামক রেখার সমীকরণ ও পরাবৃত্তের সমীকরণ
নির্ণয়, উপকেন্দ্র এবং নিয়ামক রেখার সমীকরণ নির্ণয় করে পরাবৃত্তের সমীকরণ নির্ণয়, পরাবৃত্তের
উপকেন্দ্রিক দূরত্ব প্রয়োগ।
উপবৃত্ত:
উপবৃত্তের উৎকেন্দ্রিকতা, উপকেন্দ্র, উপকেন্দ্রিক লম্বের দৈর্ঘ্য ও সমীকরণ এবং
নিয়ামক রেখার সমীকরণ নির্ণয় সংক্রান্ত, উৎকেন্দ্রিকতা ও নিয়ামক রেখার সমীকরণ হতে উপবৃত্তের সমীকরণ নির্ণয়
সংক্রান্ত, নির্দিষ্ট বিন্দুগামী উপবৃত্তের সমীকরণ নির্ণয় সংক্রান্ত, বিভিন্ন ক্ষেত্রে
উপবৃত্তের সমীকরণ নির্ণয় সংক্রান্ত, উপবৃত্তের পরামিতিক স্থানাঙ্ক নির্ণয় সংক্রান্ত।
· সপ্তম অধ্যায় (বিপরীত ত্রিকোণমিতিক ফাংশন ও ত্রিকোণমিতিক মীকরণ):
বিপরীত ত্রিকোণমিতিক
ফাংশনের প্রমাণ সংক্রান্ত, বিপরীত ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের মান নির্ণয় সংক্রান্ত, বিপরীত
ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের গ্রাফ অঙ্কন, ত্রিকোণমিতিক সমীকরণ সমাধান সংক্রান্ত এবং নির্দিষ্ট
ব্যবধিতে ত্রিকোণমিতিক সমীকরণ সমাধান সংক্রান্ত।
· অষ্টম অধ্যায়
(স্থিতিবিদ্যা):
বলের লম্বাংশ উপপাদ্য
সংক্রান্ত, দুইটি বলের লব্ধির মান, দিক এবং অন্তর্গত কোণ নির্ণয় সংক্রান্ত, বলের মান
ও অনুপাত নির্ণয় সংক্রান্ত, বলের সাইন সূত্র প্রয়োগ করে প্রমাণ সংক্রান্ত, লম্বাংশ
সূত্রের সাহায্যে বলের মান, দিক নির্ণয় এবং প্রমাণ সংক্রান্ত, লামির উপপাদ্যের সাহায্যে
বলগুলোর মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় সংক্রান্ত, বলত্রয়ের সাম্যাবস্থা সংক্রান্ত, লামির উপপাদ্য
প্রয়োগ করে প্রমাণ সংক্রান্ত, টান নির্ণয় সংক্রান্ত, লব্ধির সরণ নির্ণয়, সদৃশ সমান্তরাল
বল ও বিসদৃশ বলের প্রমাণ সংক্রান্ত সমস্যাবলী, সদৃশ ও বিসদৃশ বলের লব্ধির ক্রিয়াবিন্দু
সংক্রান্ত, ওজন ও চাপ নির্ণয় সংক্রান্ত, সদৃশ ও বিসদৃশ বলের লব্ধি, লব্ধির মান ও ক্রিয়া
রেখা নির্ণয়।
· নবম অধ্যায়
(সমতলে বস্তুকণার গতি):
বেগের সামান্তরিক
সূত্র ও লম্বাংশ উপপাদ্য সংক্রান্ত, নদী ও স্রোত সংক্রান্ত, দূরত্ব নির্ণয় সংক্রান্ত,
অতিক্রান্ত দূরত্ব, বেগ, ত্বরণ নির্ণয় সংক্রান্ত, আদিবেগ = 0 শর্তে দূরত্ব, সময়, বেগ,
ত্বরণ নির্ণয় সংক্রান্ত, গতির সমীকরণের সাহায্যে প্রমাণ সংক্রান্ত, পড়ন্ত বস্তু ও নিক্ষিপ্ত
বস্তুর গতির সমীকরণের সমাধান সংক্রান্ত, প্রক্ষেপক বা প্রাসের গতি সংক্রান্ত।
þ পরীক্ষার
হলে করণীয়:
·
পরীক্ষার দিন যথাসময়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড,
ক্যালকুলেটর, জ্যামিতি বক্স অবশ্যই সাথে রাখতে হবে।
·
পরীক্ষার উত্তরপত্র হাতে পাবার পর প্রথমেই রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর সঠিকভাবে পূরণ
করবে। সৃজনশীল অংশের উত্তর পত্রে বামে ও উপরে ১ ইঞ্চি করে জায়গা রেখে মার্জিন টানবে।
ফলে উত্তরপত্র সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে।
·
প্রশ্নপত্র হাতে পাবার পর প্রথমেই দেখতে হবে সব প্রশ্ন ঠিকমত ছাপা এসেছে কিনা।
·
অতঃপর মনোযোগ সহকারে প্রশ্ন পড়তে হবে এবং যে প্রশ্নগুলো তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা
আলাদাভাবে চিহ্নিত করে রাখবে। প্রশ্ন পড়ার সময়ই তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি ‘ক’ ও ‘খ’ বিভাগ থেকে কোন ৫ টি প্রশ্নের উত্তর করবে (প্রত্যেক বিভাগ
থেকে ন্যূনতম ২ টি)।
? খাতায়
লেখার কৌশল:
· বহুনির্বাচনি
অংশ (MCQ):
বহুনিবার্চনি অংশে উত্তর করার সময় শুরুতেই
তোমার প্রশ্নপত্রের সেট দেখে নিবে। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমার কাছে সহজ এবং প্রশ্ন
দেখামাত্রই উত্তর করতে পারবে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে করবে। বহুপদী প্রশ্নের উত্তর
করার সময় প্রতিটি অপশন ভালো করে যাচাই করে এরপর উত্তর করবে। অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্নের
উত্তর করার সময় উদ্দীপক মনোযোগ সহকারে পড়ে উত্তর করবে। কারণ অভিন্ন প্রশ্নে দুইটি
অধ্যায়ের বিষয়বস্তু একসাথে থাকতে পারে। যে প্রশ্নগুলো তোমার কাছে তুলনামূলক কঠিন
মনে হবে সে প্রশ্নগুলো সবার শেষে উত্তর করবে।
· সৃজনশীল
অংশ (CQ) :
ü
উদ্দীপকের মূল বিষয়বস্তু চিহ্নিত করে প্রশ্নে কি জানতে চাওয়া হয়েছে তা প্রথমে সঠিকভাবে
বুঝতে হবে। অনেক সময় একটি প্রশ্ন একাধিক অংশ নিয়ে গঠিত হয়। উত্তর করার সময় প্রতিটি
অংশ চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
ü
সহজ স্তরের প্রশ্নে (ক-নং) ছোট ক্যালকুলেশনের প্রশ্ন আসে। বিগত বছরে আসা প্রশ্নগুলো
অনুশীলন করলে কমন পাওয়া যায়।
ü
মধ্যম ও কঠিন স্তরের প্রশ্নের ক্ষেত্রে (খ-নং ও গ-নং) উদ্দীপকের সাথে মিল রেখে ও প্রশ্ন
বুঝে উত্তর দিতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক কোনো উত্তর লেখা যাবে না।
þ সময় ব্যবস্থাপনা:
·
পরীক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের মধ্যে সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য শুরুতেই একটি
পরিকল্পনা করতে হবে।
·
অপেক্ষাকৃত সহজ প্রশ্নের উত্তর শুরুতে দিতে হবে।
·
কোনো একটি প্রশ্নে অধিক সময় ব্যয় করে অন্য প্রশ্নের উত্তর বাকি রাখা যাবে না। মনে
রাখবে অতিরিক্ত কিছু লেখার চেয়ে সময় অনুযায়ী সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো— পরীক্ষার
আগে শুধুমাত্র বোর্ড পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো বার বার বুঝে অনুশীলন করবে। যথাসম্ভব
মানসিক ও স্নায়ুচাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবে। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখো এবং
একটি সুন্দর পরীক্ষা দাও। তোমাদের জন্য দোয়া ও শুভকামনা।