এইচএসসি জীববিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষায় যেভাবে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে !

প্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা,
জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র পরীক্ষাটি খুব শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আশা করি সকলেই পরীক্ষার
জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছো। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য সঠিক প্রস্তুতির
পাশাপাশি পরীক্ষার খাতায় সঠিকভাবে উপস্থাপন করাও জরুরী। ভালো প্রস্তুতি গ্রহণ থেকে
শুরু করে পরীক্ষায় উপস্থাপন প্রতিটি বিষয় একটি অপরটির সাথে জড়িত। জীববিজ্ঞান প্রথম
পত্র (উদ্ভিদবিজ্ঞান) পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে কিছু কৌশল অবলম্বন
করতে হবে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার কিছু কৌশল নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
q শেষ মুহুর্তের
প্রস্তুতি:
বোর্ড পরীক্ষার
প্রশ্নগুলো প্রায় বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর অনুরূপ হয়ে থাকে। তাই পরীক্ষার পূর্বে এই
অল্প সময়ে কলেজের পরীক্ষায় আসা বিভিন্ন জটিল প্রশ্নগুলো না পড়ে শুধুমাত্র বোর্ড পরীক্ষায়
আসা বিগত বছরগুলোর প্রশ্নগুলো দেখবে।
q অধ্যায়ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি:
জীববিজ্ঞান পরীক্ষায়
২টি অংশ থাকে। তত্ত্বীয় (৭৫ নম্বর) ও ব্যবহারিক (২৫ নম্বর)। তত্ত্বীয় অংশের পরীক্ষা
মূলত বহুনির্বাচনি (২৫ নম্বর) ও সৃজনশীল (৫০ নম্বর) এই দুই ভাগে বিভক্ত। সৃজনশীল অংশে
৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।
২০২৫ সালের এইচএসসি
পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হবে। জীববিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৭টি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত
রয়েছে। ৭টি অধ্যায় থেকে ৮টি সৃজনশীল প্রশ্ন পরীক্ষায় আসবে অর্থাৎ প্রতিটি অধ্যায় থেকে ১টি সৃজনশীল প্রশ্ন অবশ্যই হবে। এ কারণে যেকোনো ৫-৬টি
অধ্যায় ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলেই পরিপূর্ণ নম্বর তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রথমে সহজ
৫-৬টি অধ্যায় নির্বাচন করে নিতে হবে।
· প্রথম অধ্যায় (কোষ ও এর গঠন):
বিভিন্ন অঙ্গাণুর
গঠন ও গুরুত্ব, DNA এবং RNA এর গঠন ও পার্থক্য,
DNA অনুলিপন, ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া ও এর গুরুত্ব, জেনেটিক
কোড।
· দ্বিতীয় অধ্যায় (কোষ বিভাজন):
মাইটোসিস ও মায়োসিস
(প্রোফেজ-১) এর ধাপ, মাইটোসিস ও মায়োসিসের গুরুত্ব ও পার্থক্য, ক্রসিংওভার।
· চতুর্থ অধ্যায় (অণুজীব):
ভাইরাসের গঠন, T2 ব্যাকটেরিওফাযের গঠন, T2 ব্যাকটেরিওফাযের
লাইটিক চক্র, ব্যাকটেরিয়ার গঠন, ম্যালেরিয়া জীবাণুর এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি, ম্যালেরিয়া
পরজীবীর জনুক্রম।
· সপ্তম অধ্যায় (নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদ):
নগ্নবীজী উদ্ভিদের
বৈশিষ্ট্য, Cycas এর কোরালয়েড মূলের
গঠন, আবৃতবীজী ও নগ্নবীজী উদ্ভিদের তুলনা, Poaceae ও Malvaceae গোত্রের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও পার্থক্য।
· অষ্টম অধ্যায় (টিস্যু ও টিস্যুতন্ত্র):
ভাজক টিস্যু ও পরিবহন
টিস্যুর প্রকারভেদ ও কাজ, একবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলের অন্তর্গঠন, একবীজপত্রী উদ্ভিদের
কান্ড ও মূলের পার্থক্য।
· নবম অধ্যায় (উদ্ভিদ শারীরতত্ত¡):
উদ্ভিদের খনিজ লবণ
পরিশোষণ, পত্ররন্ধ্রের গঠন ও খোলা-বন্ধ হওয়ার কৌশল, C3 ও C4 চক্র এবং এদের পার্থক্য,
গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবস চক্র, সালোকসংশ্লেষণ ও শ^সনের মধ্যে পার্থক্য।
· একাদশ অধ্যায় (জীবপ্রযুক্তি):
টিস্যু কালচার পদ্ধতির
ধাপসমূহ ও প্রয়োগ, রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির ধাপসমূহ
ও প্রয়োগ।
q পরীক্ষার হলে করণীয়:
· পরীক্ষার দিন যথাসময়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে হবে।
নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত এবং আত্মবিশ্বাসী রাখার চেষ্টা করবে।
· পরীক্ষার উত্তরপত্র হাতে পাবার পর প্রথমেই রোল এবং
রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভালোভাবে পূরণ করে নিবে। সৃজনশীল অংশের উত্তরপত্রে বামে ও উপরে
১ ইঞ্চি করে ফাঁকা রেখে মার্জিন টানবে। এতে করে উত্তরপত্র সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে।
· প্রশ্নপত্র হাতে পাবার পর প্রথমেই দেখতে হবে সব প্রশ্ন
ঠিকমত ছাপা এসেছে কিনা।
· এরপর মনোযোগ সহকারে প্রশ্ন পড়তে হবে এবং যে প্রশ্নগুলো
তোমার কাছে সহজ মনে হয় ও চিত্র সংক্রান্ত তা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে রাখতে পারো। কারণ
যেসব প্রশ্নে চিত্র চাওয়া হয় সে প্রশ্নে সঠিক চিত্র অঙ্কনে পরিপূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়।
প্রশ্ন পড়ার সময়ই তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি ৮টি সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে কোন ৫টির
উত্তর করবে। এক্ষেত্রে সেই প্রশ্নগুলোরই উত্তর করবে যেগুলোর উত্তর করা তোমার জন্য সহজ
হবে।
& খাতায় লেখার কৌশল:
i. বহুনির্বাচনি অংশ (MCQ): বহুনির্বাচনী অংশে
উত্তর করার সময় শুরুতেই তোমার সেট সম্পর্কে খেয়াল রাখবে। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমার
কাছে সহজ এবং প্রশ্ন দেখা মাত্রই উত্তর করতে পারবে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে করবে।
বহুপদী প্রশ্নের উত্তর করার সময় প্রতিটি অপশন ভালো করে যাচাই করে এরপর উত্তর করবে।
অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর করার সময় উদ্দীপক ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিয়ে এরপর উত্তর
করবে। কারণ অভিন্ন প্রশ্নে ২টি অধ্যায়ের কনসেপ্ট মিলিয়ে প্রশ্ন হতে পারে। যে প্রশ্নগুলো
তোমার কাছে কঠিন অথবা উত্তর তোমার জানা আছে কিন্তু ঠিক ঐ সময় মনে পড়ছে না সে প্রশ্নগুলোর
পেছনে সময় নষ্ট না করে সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর করে এরপর ঠান্ডা মাথায় বাকি প্রশ্নগুলোর
উত্তর করবে।
ii. সৃজনশীল অংশ (CQ):
· প্রশ্নের মূল বিষয়বস্তু চিহ্নিত করে প্রশ্নে কী
জানতে চাওয়া হয়েছে তা প্রথমে ভালোভাবে বুঝতে হবে। অনেক সময় একটি প্রশ্ন একাধিক অংশ
নিয়ে গঠিত হয়, উত্তর করার ক্ষেত্রে প্রতিটি অংশ চিহ্নিত করা জরুরী।
· জ্ঞানমূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে মূলত সংজ্ঞা বা ছোট
প্রশ্ন আসে যা সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট উত্তর করতে হবে। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত
ব্যাখ্যা মূলক (যেমন- কারণ, কেন) প্রশ্ন এসে থাকে। শুরুতেই মূল তথ্য দিয়ে সংক্ষেপে
২-৩ লাইনের মধ্যে ব্যাখ্যা করবে।
· বর্ণনামূলক (গ ও ঘ নং) প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রশ্নের
চাহিদা অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মনে রাখবে অতিরিক্ত কিছু লেখার
চেয়ে প্রাসঙ্গিক এবং সঠিক উত্তর লেখাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
· জীববিজ্ঞান প্রথম পত্রের অনেক প্রশ্নের উত্তরে চিত্রাঙ্কন
গুরুত্বপূর্ণ। চিত্রের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর আরও স্পষ্ট এবং আকর্ষণীয় হবে।
· বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং ধারণার উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা
করতে হবে। উদাহরণগুলো প্রশ্নের উত্তরটিকে স্পষ্ট করে তুলবে।
q সময় ব্যবস্থাপনা:
· পরীক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের মধ্যে সকল প্রশ্নের
উত্তর দেওয়ার জন্য শুরুতেই একটি পরিকল্পনা তৈরী করে নিতে হবে।
· কোনো একটি প্রশ্নে অধিক সময় ব্যয় করে অন্য প্রশ্নের
উত্তর বাকি রাখা যাবে না। মনে রাখবে অতিরিক্ত কিছু লেখার চেয়ে সময় অনুযায়ী সকল প্রশ্নের
উত্তর দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রিয় পরীক্ষার্থীরা, তোমাদের জীববিজ্ঞান
প্রথম পত্র পরীক্ষাটি শুধু একটি পরীক্ষা নয় বরং এটি তোমাদের অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস
এবং দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের একটি মূল্যায়ন। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য দরকার সঠিক প্রস্তুতি,
সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং প্রশ্নপত্রের প্রতি মনোযোগী দৃষ্টিভঙ্গি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় হলো- পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম খুবই দরকার। মস্তিষ্ক সতেজ থাকলে পরীক্ষায় মনোযোগ
দিতে পারবে এবং মনেও থাকবে বেশি। তাই চিন্তামুক্ত হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করো, নিজের
উপর বিশ্বাস রাখো এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দাও।