এইচএসসি রসায়নর ১ম পত্র পরীক্ষায় যেভাবে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে !

প্রিয়
এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা, তোমাদের রসায়ন প্রথম পত্র পরীক্ষা খুব শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে
যাচ্ছে। তোমরা সকলেই এখন শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। সঠিক পরিকল্পনা, মনোযোগ,
এবং নিয়মিত প্রস্তুতির মাধ্যমে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন সম্ভব। ভালো ফলাফল করতে সঠিক
প্রস্তুতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি পরীক্ষার খাতায় তা সুন্দরভাবে উপস্থাপনও অনেক বেশি
গুরুত্বপূর্ণ। তোমাদের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনে
পরীক্ষা প্রস্তুতি এবং পরীক্ষার হলে করণীয় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক নির্দেশনা
তুলে ধরা হলোঃ
q
পরীক্ষা প্রস্তুতি সংক্রান্ত করনীয়ঃ
উচ্চ
মাধ্যমিক পরীক্ষায় রসায়ন বিষয়ে মূলত দুইটি অংশে পরীক্ষা হয়ে থাকে। ১) তত্ত্বীয় অংশ (৭৫ নম্বর) ২) ব্যবহারিক অংশ (২৫
নম্বর)। তত্ত্বীয় অংশের পরীক্ষা মূলত বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল দুই ভাগে সম্পন্ন হয়।
·
অধ্যায়ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিঃ সিলেবাস অনুযায়ী রসায়ন প্রথম পত্রের প্রতিটি অধ্যায়ের
গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। যে অধ্যায়গুলো তোমার কাছে তুলনামূলক
সহজ মনে হয় অথবা ভালো বোঝো উক্ত অধ্যায়গুলোতেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়ো। পরীক্ষার আগে অল্প সময়ে কঠিন বিষয়ে বেশি সময় দিয়ে
সময় নষ্ট করা যাবে না।
দ্বিতীয়
অধ্যায় গুণগত রসায়ন (আংশিক): এই অধ্যায়ে
তত্ত্বীয় বিষয় বেশি , তবে তত্ত্বীয় বিষয়ের পাশাপাশি কিছু গাণিতিক সমস্যাও রয়েছে। তাই
অধ্যায়ের তত্ত্বীয় অংশের প্রতিটি বিষয় খুব ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। তত্ত্বীয় অংশের গুরুত্বপূর্ণ
কিছু বিষয় হলোঃ রাদারফোর্ড ও বোর পরমাণু মডেল, কোয়ান্টাম সংখ্যা, আউফবাউ, হুন্ড ও পাওলির
বর্জন নীতি, দ্রাব্যতা ও দ্রাব্যতা নীতি। এছাড়াও গাণিতিক অংশের জন্য তড়িৎ চুম্বকীয়
বর্ণালী, দ্রাব্যতা ও দ্রাব্যতা গুণফল ও সম আয়ন প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাণিতিক
অংশ সহজে সমাধান করতে প্রয়োজনীয় সূত্রগুলো ভালোভাবে মুখস্ত করে বারবার অনুশীলন করতে
হবে।
তৃতীয় অধ্যায়
মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন (আংশিক): এই অধ্যায়ে মূলত তত্ত্বীয় বিষয় রয়েছে। বহুনির্বাচনি
ও সৃজনশীল অংশে ভালো করতে অধ্যায়ের তত্ত্বীয় সকল বিষয় বুঝে বুঝে পড়তে হবে । তত্ত্বীয় অংশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোঃ ইলেকট্রন
বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণিবিভাগ, মৌলসমূহের পর্যায়বৃত্ত ধর্মসমূহ এবং এর ব্যাতিক্রম
সমূহ, অরবিটাল সংকরণ ও সংকর অরবিটাল, অণুর আকৃতি ও বন্ধন কোণ নির্ণয়, সমযোজী যৌগের
আয়নিক বৈশিষ্ট্য, আয়নিক যৌগের সমযোজী বৈশিষ্ট্য, ফাজানের নীতি ও হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন।
চতুর্থ অধ্যায়
রাসায়নিক পরিবর্তন (আংশিক): এই অধ্যায়ে
তত্ত্বীয় অংশের পাশাপাশি গাণিতিক সমস্যাবলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । বহুনির্বাচনী পরীক্ষার
জন্য তত্ত্বীয় এবং গাণিতিক উভয় অংশই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তত্ত্বীয় অংশের গুরুত্বপূর্ণ
কিছু বিষয় হলোঃএকমুখি ও উভমুখি বিক্রিয়া, রাসায়নিক সাম্যাবস্থা, লা শাতেলিয়ারের নীতি,
এসিড ও ক্ষারের তীব্রতা, বাফার দ্রবণ এবং এর ক্রিয়া কৌশল। তবে সৃজনশীল পরীক্ষার (গ)
ও (ঘ) অংশে মূলত গাণিতিক সমস্যাবলি থেকে প্রশ্ন এসে থাকে । তাই অধায়ের সকল গাণিতিক
সূত্রাবলি মুখস্ত করে নিয়ে সমস্যাগুলো ভালোভাবে
অনুশীলন করে নিতে হবে। গাণিতিক সমস্যাবলি সমাধানের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো
ভালোভাবে মুখস্ত করে নিতে হবে। গাণিতিক অংশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোঃ Kp
ও Kc নির্ণয়, বিভিন্ন ধরনের এসিড ও ক্ষারের pH ও pOH নির্ণয়, পানির আয়নিক
গুণফল (Kw), বাফার দ্রবণ ও হেন্ডারসন-হেসেলবাখ সমীকরণ।
পঞ্চম অধ্যায়
কর্মমুখি রসায়ন (আংশিক): এই অধ্যায়ে
মূলত তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। রসায়ন প্রথম পত্র পরীক্ষায় অন্য তিনটি অধ্যায়ের
তুলনায় এই অধ্যায় হতে তুলনামূলক কম প্রশ্ন এসে থাকে। এই অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত সকল
বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ ।
দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ অধ্যায় পরীক্ষার জন্য সমানভাবে
গুরুত্বপূর্ণ । তাই প্রস্তুতির সময়টুকু সমানভাবে ভাগ করে নিয়ে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়গুলো ভালো করে ঝালাই করে নাও।
·
বোর্ড পরীক্ষার
প্রশ্নগুলো প্রায়ই বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর অনুরূপ হয়ে থাকে। তাই পরীক্ষার পূর্বে এই
অল্প সময়ে কলেজের পরীক্ষায় আসা বিভিন্ন জটিল প্রশ্নগুলো না পড়ে শুধুমাত্র বোর্ড পরীক্ষায়
আসা বিগত বছরগুলোর প্রশ্নগুলো দেখবে।
·
দ্বিতীয় ও চতুর্থ
অধ্যায়ে বিভিন্ন গাণিতিক সূত্র রয়েছে। এছাড়াও চতুর্থ অধ্যায়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া রয়েছে।
অনুশীলনের সুবিধার্থে তোমরা এই সূত্রগুলো এবং রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো আলাদাভাবে নোট
করে রাখতে পারো । এতে করে বিক্রিয়া ও সূত্রগুলো তোমাদের একসাথে মনে রাখতে সুবিধা হবে
পাশাপাশি পরীক্ষার হলে যাওয়ার পূর্বে অল্প সময়ে দেখে যেতে পারবে।
·
পরীক্ষার আগের
রাতে ভালো ঘুম খুবই দরকার। মস্তিষ্ক সতেজ থাকলে পরীক্ষায় মনোযোগ দিতে পারবে এবং মনেও
থাকবে বেশি।
q
পরীক্ষার হলে করণীয়ঃ
পরীক্ষার দিন যথাসময়ে পরীক্ষার হলে পৌছাতে হবে। নিজেকে
টেনশনমুক্ত এবং আত্মবিশ্বাসী রাখার চেষ্টা করবে।
·
পরীক্ষার উত্তরপত্র
হাতে পাবার পর প্রথমেই রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভালোভাবে পূরণ করে নিবে। সৃজনশীল
অংশের উত্তরপত্রে বামে ও উপরে ১ ইঞ্চি করে ফাঁকা রেখে মার্জিন টানবে। এতে করে উত্তরপত্র
সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে।
·
প্রশ্নপত্র হাতে
পাবার পরে প্রথমেই দেখতে হবে সব প্রশ্ন ঠিকমত ছাপা এসেছে কিনা। শুরুতেই দেখে নিতে হবে
প্রশ্নে কোন বিভাগ থেকে কতগুলো উত্তর করতে বলা হয়েছে। এরপর মনোযোগ সহকারে প্রশ্ন পড়তে
হবে এবং যে প্রশ্নগুলো তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে রাখতে পারো।
প্রশ্ন পড়ার সময়ই তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তুমি ৮ টি সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে কোন
৫টির উত্তর করবে। এক্ষেত্রে সেই প্রশ্নগুলোরই উত্তর করবে যেগুলো তুমি ভালোভাবে পড়ে
এসেছ।
·
খাতায় লেখার কৌশলঃ
(১) বহুনির্বাচনি
অংশঃ বহুনির্বাচনী অংশে উত্তর করার
সময় শুরুতেই তোমার সেট সম্পর্কে খেয়াল রাখবে। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমার কাছে সহজ
এবং প্রশ্ন দেখা মাত্রই উত্তর করতে পারবে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে করবে। গাণিতিক সমস্যাবলির
ক্ষেত্রে যে তথ্যগুলো দেওয়া আছে তা ভালোভাবে বুঝে সঠিক সূত্র ব্যবহার করে উত্তর বের
করবে। প্রয়োজনে দ্বিতীয়বার যাচাই করে নিবে। বহুপদী প্রশ্নের উত্তর করার সময় প্রতিটি
অপশন ভালো করে যাচাই করে এরপর উত্তর করবে । অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর করার
সময় উদ্দীপক ভালোভাবে পড়ে বুঝে নিয়ে এরপর উত্তর করবে। যে প্রশ্নগুলো তোমার কাছে কঠিন
অথবা উত্তর তোমার জানা আছে কিন্তু ঠিক ঐ সময় মনে পড়ছে না সে প্রশ্নগুলোর পেছনে সময়
নষ্ট না করে সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর করে এরপর ঠান্ডা মাথায় বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর করবে।
(২) সৃজনশীল
অংশঃ সৃজনশীল অংশে যে প্রশ্নগুলোর
উত্তর তুমি খুব সহজে পারবে সেগুলো আগে করবে। এতে করে তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। সৃজনশীল
অংশে মূলত ৪ ধরনের প্রশ্ন এসে থাকে।
(ক) বা জ্ঞানমূলকঃ জ্ঞানমূলক অংশে মূলত সংঙ্গা বা ছোট প্রশ্ন এসে থাকে।
প্রশ্নগুলো এক লাইনে সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট উত্তর করতে হবে।
(খ) বা অনুধাবনমূলকঃ
অনুধাবনমূলক অংশে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
এসে থাকে। উত্তর করার সময় শুরুতেই মূল তথ্য
এক লাইনে দিয়ে এরপর সংক্ষেপে ৩-৪ লাইনে ব্যাখ্যা করতে হবে।
(গ) বা প্রয়োগমূলক
এবং (ঘ) বা উচ্চতর দক্ষতামূলকঃ (গ)
এবং (ঘ) নং প্রশ্নের উত্তর মূলত উদ্দীপক কেন্দ্রিক হয় । তাই শুরুতেই উদ্দীপক ভালোভাবে
পড়ে নিতে হবে এবং এরপর প্রশ্ন পড়ে উত্তর করতে হবে। (গ) এবং (ঘ) নং প্রশ্নে মূলত বিভিন্ন
বিষয় ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, দুইটি বিষয়ের মাঝে তুলনা কিংবা গাণিতিক সমস্যা দেওয়া থাকে।
বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর করার সময় শুরুতেই উদ্দীপক ও প্রশ্ন অনুযায়ী মূল উত্তরটি
শুরুতে লিখে প্রশ্নের উত্তর শুরু করা ভালো। এরপর উক্ত উত্তরের স্বপক্ষে উদ্দীপক ও বইয়ের
তথ্য অনুযায়ী বিশ্লেষণ করতে হবে। গাণিতিক সমস্যাবলির ক্ষেত্রে শুরুতেই উদ্দীপক থেকে
প্রদত্ত তথ্যগুলো লিখে নিতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় সূত্রটি লিখে ধাপে ধাপে গাণিতিক সমস্যাটি
সমাধান করতে হবে। উত্তর করার সাথে সাথেই একবার পুনরায় ক্যালকুলেশন ঠিক আছে কিনা যাচাই
করে নিতে হবে। এই অংশে অনেক সময় চিত্র আঁকানোর প্রয়োজন হয় অথবা যেখানে চিত্র প্রদান
করে ব্যাখ্যা করা সম্ভব সেখানে চিত্র প্রদান করবে। চিত্র আঁকানোর ক্ষেত্রে পেন্সিল
ব্যবহার করে চিত্র আঁকাবে।
·
খাতায় উত্তর করার
সময় চেষ্টা করবে যতটা সম্ভব সুন্দর এবং স্পষ্টভাবে লিখার। তোমার উত্তরপত্র যত সুন্দর
হবে তোমার বেশি নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে। যদি ভুল হয়, তাহলে একটানা
দাগ দিয়ে কেটে দাও, ঘষামাজা বা কাটাকাটি করবে না। খাতায় অতিরিক্ত কাটাকাটি,
অস্পষ্ট লেখা বা এলোমেলো সংশোধন পরীক্ষকের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। এতে খাতা মূল্যায়নের
সময় পরীক্ষক তোমার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে পারেন, ফলে নম্বর কমে যাওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
·
পরীক্ষার
হলে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রেখে সময় ধরে ধরে উত্তর করার
চেষ্টা করবে। কোনো একটি প্রশ্নে অতিরিক্ত
সময় ব্যয় করবে না, যাতে অন্য প্রশ্নগুলোর উত্তর
অসমাপ্ত থেকে যায়। সময়ের সঠিক ব্যবহার করবে এবং সব
প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে।
·
প্রশ্নে
যতটুকু চাওয়া হয়েছে ততটুকুই স্পষ্টভাবে উত্তর করবে । একই জিনিস বার বার লিখে খাতা
ভরানোর চেষ্টা করবে না। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত লেখা দেখে পরীক্ষক বিরক্ত বোধ করতে
পারেন। এর ফলে অতিরিক্ত নম্বর কাটা যাবে ।
·
সবশেষে সবগুলো
প্রশ্নের উত্তর করেছ কিনা একবার দেখে নিবে।
প্রিয়
পরীক্ষার্থীরা, তোমাদের রসায়ন প্রথম পত্র পরীক্ষাটি শুধু একটি পরীক্ষা নয় বরং এটি
তোমাদের অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস এবং দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের একটি মূল্যায়ন। পরীক্ষায় ভালো
ফলাফলের জন্য দরকার সঠিক প্রস্তুতি, সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং প্রশ্নপত্রের প্রতি মনোযোগী
দৃষ্টিভঙ্গি। তাই চিন্তামুক্ত হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করো, নিজের উপর বিশ্বাস রাখো এবং
সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দাও।