এইচএসসি পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রে সর্বোচ্চ নম্বরের জন্য সঠিক প্রস্তুতি ও কৌশল !

প্রিয় এইচএসসি পরীক্ষার্থী, আশা করি তোমার পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র পরীক্ষা ভালো হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সামনের পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র পরীক্ষার জন্য তোমার পরিশ্রমের সাথে সঠিক কৌশল অবলম্বনে তুমি চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে পারবে। মনে রাখবে, সেরা নম্বর পেতে হলে গুরুত্বপূর্ণ ও তোমার আয়ত্ত্বে আছে এরকম অধ্যায়গুলোতে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যাবশ্যক। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যা পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র পরীক্ষায় তোমার সেরা ফলাফলটি পেতে সাহায্য করবে।

অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি (সৃজনশীল অংশ):

· সহজ অধ্যায়গুলো আগে নির্বাচন করো (তোমাকে ৮টি থেকে মোট ৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে):

অধ্যায়, ৮ (আংশিক) ও ৯: প্রশ্নোত্তরে প্রথম, অষ্টম ও নবম অধ্যায়ের সূত্রগুলোর প্রয়োগ এবং গাণিতিক সমস্যার সমাধান তুলনামূলক সহজ। এ অধ্যায়গুলো থেকে আসা প্রশ্নের অংশের সমাধান মূলত গাণিতিক সমস্যা হয় এবং তাত্ত্বিক বিষয়াবলি লেখার খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। এই অধ্যায় তিনটি হতে কমপক্ষে ১টি করে মোট তিনটি প্রশ্ন প্রায় প্রতি বছরই আসে।

অধ্যায়২ ও ৩: প্রথমে প্রথম, অষ্টম ও নবম অধ্যায় পড়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। এই অধ্যায় দুটি হতে প্রতি বছরই কমপক্ষে ১টি করে মোট দুটি প্রশ্ন আসে। এই অধ্যায় দুটির প্রশ্নে ভালো রকম সৃজনশীলতা আনা সম্ভব। তৃতীয় অধ্যায় হতে অনেক বছরই দুটি প্রশ্নও করা হয়ে থাকে।

অধ্যায়৭ ও ১০: সপ্তম ও দশম অধ্যায় হতে কমপক্ষে ১টি করে প্রশ্ন প্রতি বছরই আসে। এই অধ্যায় দুটি হতে প্রায়শই তুলনামূলক কঠিন প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। তাই অন্যান্য অধ্যায়ের প্রশ্ন কমন পরলে যদি দেখো যে এই অধ্যায় হতে জটিল প্রশ্ন এসেছে তাহলে এরূপ জটিল প্রশ্নের উত্তর না করাই উত্তম। সপ্তম অধ্যায়ের ভিন্ন ভিন্ন টপিকের গাণিতিক সূত্রগুলোতে বেশ মিল রয়েছে (যেমন: ব্যতিচার ও অপবর্তন ডোরার উজ্জ্বল-অন্ধকারের শর্তসমূহ), যার ফলে সতর্ক না থাকলে ভুল হতে পারে। দশম অধ্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে ‘গ’ অথবা ‘ঘ’ অংশের প্রশ্নের উত্তর তাত্ত্বিক হয়। এরকম প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পূর্ণ নম্বর পেতে হলে খুবই নিখুঁতভাবে উত্তর করে মার্জিতভাবে উপস্থাপন করতে হবে

লক্ষ করো, প্রস্তুতির সময় কম রয়েছে মনে হলে তুমি চাইলে শুধুমাত্র তুলনামূলক সহজ অধ্যায়গুলো [প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম (আংশিক) ও নবম অধ্যায়] ভালোভাবে পড়েই ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে বাকি দুটি অধ্যায় বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তরের জন্য অবশ্যই ভালো করে পড়তে হবে।

· অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোতে মনোযোগ দাও টপিকগুলো নিম্নরূপ:

প্রথম অধ্যায় (তাপগতিবিদ্যা): তাপ, তাপীয় সমতা, অভ্যন্তরীণ শক্তি, কাজ, প্রত্যাবর্তী ও অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া, কার্নো চক্র, রেফ্রিজারেটর, ইঞ্জিনের দক্ষতা, এনট্রপি কার্নো চক্র ও ইঞ্জিনের দক্ষতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয় অধ্যায় (স্থির তড়িৎ): কুলম্বের সূত্র, তড়িৎ বল, তড়িৎ প্রাবল্য ও তড়িৎ বিভব, ধারকের সংযোগ ও তুল্যধারকত্ব।

তৃতীয় অধ্যায় (চল তড়িৎ): জুলের সূত্র, রোধের উপর তাপমাত্রার প্রভাব, রোধের সংযোগ ও তুল্যরোধ, কির্শফের সূত্র। রোধের সংযোগ ও তুল্যরোধ এবং কির্শফের সূত্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সপ্তম অধ্যায় ( ভৌত আলোকবিজ্ঞান): হাইগেনের নীতি, আলোর ব্যতিচার, অপবর্তন ও সমবর্তন।

অষ্টম অধ্যায় (আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সূচনা): দৈর্ঘ্য সংকোচন, ভর বৃদ্ধি, সময় সম্প্রসারণ/কাল দীর্ঘায়ন, ভর শক্তির সম্পর্ক, কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ, ফটোইলেকট্রিক ক্রিয়া।

নবম অধ্যায় (পরমাণুর মডেল এবং নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান): তেজস্ক্রিয়তা, ক্ষয়, অর্ধজীবন, গড় জীবন, ভর ত্রুটি, বন্ধন শক্তি, ফিউশন ও ফিশন বিক্রিয়া।

দশম অধ্যায় ( সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিক্স): পি-টাইপ ও এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর, জাংশন ডায়োডের কার্যক্রম, একমুখীকরণ, ট্রানজিস্টর, নম্বর পদ্ধতি, লজিক গেট।

উপরোক্ত অধ্যায়ভিত্তিক টপিকগুলো ভালোভাবে বুঝে পড়লে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করা খুবই সহজ হবে। তবে এই টপিক ব্যতীত অন্য টপিক থেকেও অনেক সময় প্রশ্ন হয়ে থাকে, তাই সময় থাকলে পাঠ্যবইয়ের অন্য টপিকগুলোও পড়ার চেষ্টা করতে হবে।

অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি (বহুনির্বাচনি অংশ):

MCQ-তে ভালো করার জন্য প্রতিটি অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু, ছোট ছোট সংজ্ঞা ও উদাহরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি এবং তুলনামূলক সহজ গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে হবে, মুখস্ত না করে বুঝে পড়লে MCQ-তে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে আমার পরামর্শ হবে বিগত বছরের সকল বোর্ডে আসা MCQ প্রশ্নগুলো ভালোভাবে বুঝে চর্চা করবে, তাহলে খুব সহজেই অল্প পড়ে ভালো প্রস্তুতি নিতে পারবে। কারণ প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রায় ৮০% থেকে ৯০% প্রশ্ন বিগত পরীক্ষার প্রশ্নের অনুরূপ হয়ে থাকে।

খাতায় লেখার কৌশল ও উপস্থাপন (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ):

· প্রশ্ন ভালোভাবে পড়া ও প্রশ্ন নির্বাচন করা: প্রতিটি প্রশ্ন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বে। কী জানতে চাওয়া হয়েছে, তা বোঝার চেষ্টা করো। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে প্রশ্ন ভুল পড়লে উত্তরও ভুল হয়ে যায়। প্রথমে নির্ধারণ করো তুমি কোন প্রশ্নগুলো উত্তর করবে এবং সবচেয়ে সহজ উত্তর যেটির হবে বলে মনে হয় তা দিয়ে শুরু করো।

· নম্বর অনুযায়ী মার্জিতভাবে উত্তর লেখা: উত্তর লেখার ক্ষেত্রে সবসময় খেয়াল রাখবে যে বেশি লিখলেই বেশি নম্বর পাওয়া যায় না, এমনকি কখনও কখনও বেশি লেখার কারণে পরীক্ষকগণ নম্বর কম দিয়ে থাকেন। তাই প্রশ্নের নম্বর অনুসারে উত্তর লিখার দিকে খেয়াল রাখবে। যেমন: সৃজনশীল (ক) নং প্রশ্নের নম্বর ১ হওয়ায় (ক) এর জন্য ১ বা সর্বোচ্চ ২ লাইনে উত্তর লিখবে এবং সৃজনশীল (খ) নং প্রশ্নের নম্বর ২ হওয়ায় প্রশ্নের উত্তর ৫ বা ৬ লাইনে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতে পারলেই যথেষ্ট। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবে প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে সেটি যেন উক্ত লেখার মধ্যেই স্পষ্টভাবে তুলে ধরা যায়। উত্তরের শুরুতেই মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে এবং অপ্রাসঙ্গিক কিছু লিখবে না।

· পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন লেখা: তোমার লেখা যত সুন্দর ও স্পষ্ট হবে, পরীক্ষকের জন্য তা পড়তে ততো সুবিধা হবে। কাটাকাটি যথাসম্ভব কম করবে। যদি ভুল হয়, তাহলে একটান দিয়ে কেটে দিবে, ঘষামাজা করবে না। খাতায় বেশি কাটাকাটি এবং লেখা অস্পষ্ট হলে পরীক্ষক খাতা দেখতে বিরক্তবোধ করতে পারেন, ফলে তোমার নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। লেখা যদি সুন্দর নাও হয় তবুও অন্তত স্পষ্ট হতে হবে।

· প্রয়োজনীয় চিত্র আঁকা: অনেক ক্ষেত্রেই কোনো সমস্যার সমাধান বিশ্লেষণের জন্য চিত্র অঙ্কনের প্রয়োজন হয়। এসকল ক্ষেত্রে চিত্র আঁকতে হবে। তবে চিত্র আঁকার সময় সাবধান থাকতে হবে, কারণ ভুল চিত্র আঁকলে অবশ্যই নম্বর কাটা যাবে।

· গাণিতিক সমস্যার সমাধান: অনেকেই গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সময় কিছু লাইন বাদ দিয়ে সমস্যার সমাধান করে। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে উত্তর বুঝতে সমস্যা তৈরি হয়। তাই গাণিতিক সমস্যা সমাধানে লাইন বাদ দেওয়া যাবে না। তোমরা অনেকেই সৃজনশীলের অংশে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পর তাত্ত্বিক আলোচনা করো। এই তাত্ত্বিক আলোচনার পরিমাণ কম হতে হবে এবং যদি প্রশ্নে না চায় তাহলে এই আলোচনা এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। সৃজনশীল প্রশ্নের অংশের প্রশ্নে তোমার মতামত জানতে চাওয়া হবে বা কোনো বিষয় যুক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করতে বলা হবে তাই গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পর তাত্ত্বিক আলোচনা মূলত অংশের প্রশ্নোত্তরেই করতে হয়।

· স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ: নির্ধারিত কোনো প্রশ্নের উত্তর ভুল করে ফেললে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। যদি প্রকৃত সমাধান বুঝতে পারো তাহলে তখন সেটাই শুরু করো অথবা অন্য প্রশ্নের উত্তর শুরু করে দাও। ঘাবড়ে গেলে আত্মবিশ্বাস কমে যাবে এবং ভুল করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

· সময়ের দিকে খেয়াল রাখবে: প্রতিটি প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করে নাও। কোনো একটি প্রশ্নে বেশি সময় ব্যয় করে অন্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাকি রেখে দিবে না। অবশ্যই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে।

· অতিরিক্ত লেখা থেকে বিরত থাকো: যতটুকু চাওয়া হয়েছে, ততটুকু লেখো। অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত কথা, বিশেষ করে একই কথা বারবার লিখে খাতা ভরানোর চেষ্টা করবে না। এতে পরীক্ষক বিরক্ত হতে পারেন, যার ফলে নম্বর কাটা যাবে এবং সময়ও নষ্ট হবে।

· রিভিশন দাও: সব উত্তর লেখা শেষ হলে একবার রিভিশন দাও। বানান ভুল, বাক্য গঠন, গাণিতিক চিহ্ন, হিসাব, কনসেপ্ট ভুল হলো কিনা বা কোনো তথ্য বাদ পড়লো কিনা, তা একবার দেখে নাও।

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও মানসিকতা:

· আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকো: পরীক্ষার আগের এই কয়টা দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। অস্থির না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় যা পড়ছো, তা রিভাইজ করো। মূল বিষয়গুলোতে মনোযোগ দাও।

· সময় ভাগ করে পড়ো: শেষ সময়ে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে সমানভাবে সময় দাও। নতুন কিছু শেখার চেয়ে যা পড়েছো, তা ঝালাই করাই বেশি জরুরি।

· পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করো: পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম খুবই দরকার। মস্তিষ্ক সতেজ থাকলে পরীক্ষায় মনোযোগ দিতে পারবে এবং মনেও থাকবে বেশি।

সবশেষে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো এখন পরীক্ষার আগে শুধুমাত্র বিগত বোর্ড পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলোই ভালোভাবে বুঝে পড়বে, বিভিন্ন কলেজের জটিল জটিল প্রশ্ন পড়ে শুধু শুধু নিজেকে হতাশ করবে না। কারণ বিগত বছরের বোর্ড প্রশ্নাবলি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রশ্ন বিগত বছরের পরীক্ষার প্রশ্ন থেকেই বা তার অনুরূপ হয়ে থাকে।